"মুনতাসীর মামুন রচনাবলি- ৮" বইয়ের সংক্ষিপ্ত লেখা: মুনতাসীর মামুন রচনাবলির অষ্টম খণ্ডের ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধ। এ খণ্ডে দুটি গ্রন্থ। একটি মুক্তিযুদ্ধের ১৩ নম্বর সেক্টর’, অন্যটি কবির অনশন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। বিভিন্ন দেশের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। কেউ মানবিক কারণে, কেউ নিপীড়িত জনগােষ্ঠীর অধিকার রক্ষায়, কেউ জনসমাজের ওপর অত্যাচার বন্ধের জন্য। মুক্তিযুদ্ধে বিদেশিদের ভূমিকা ছিল নানামুখী। প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকাও ছিল উজ্জ্বল। অথচ সেই অবদান ও সাহায্যের ইতিহাস বিশেষভাবে রচিত হয়নি। স্ব স্ব অবস্থানে থেকে কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তারা পৃথক পৃথক নিবন্ধে। তারই নিখুঁত বর্ণনা উঠে এসেছে এই গ্রন্থে। ‘কবির অনশন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ৯টি প্রবন্ধের সংকলন। এ গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধে অবদান থাকা সত্ত্বেও উপেক্ষিত নানা দিকের ওপর আলাে ফেলেছেন মুনতাসীর মামুন। ৭ মার্চের ভাষণ, বীরাঙ্গনা, যুদ্ধশিশুদের দত্তক আইন ইত্যাদি বিষয় ঐতিহাসিক হিসেবে ইতিহাসের কৌণিক বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণে তুলে ধরেছেন। দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে হলে ইতিহাস পাঠ যেমন বাধ্যতামূলক তেমনই মুক্তিযুদ্ধের নানা অজানা তথ্য জানতে হলে পাঠ করুন মুনতাসীর মামুন রচনাবলি অষ্টম খণ্ড।
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।