গ্রন্থ-পরিচিতি এ যাবতকাল জীবজন্তুদের নিয়ে যত গল্প কাহিনী রচিত হয়েছে তাদের মধ্যে ব্ল্যাক বিউটি সর্বোত্তম। একটি ঘোড়া তার জন্ম থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত জীবন-কাহিনী বর্ণনা করেছে এখানে। কাহিনীর বন্ধনা এমনই জীবন্ত যে পাঠককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে এবং পাঠক তার সুখ-দুঃখের সঙ্গে একাত্মতাবোধ করে।
এই কাহিনীর রচয়িতা এ্যানা সোয়েল, তিনি ১৮২০ সালে ইংল্যান্ডের ইয়ারমাউথ এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁদের সংসারে নিত্য টানাটানির মাঝেও তিনি শৈশব ও কৈশোরে ছিলেন প্রত্যন্ত প্রাণোচ্ছল। ১৮৪৫ সালে তাঁর বাবা ব্রাইটনে একটি চাকুরি পেলে তিনি প্রতিদিন ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে বাবাকে রেল স্টেশনে পৌঁছাতেন ও নিয়ে আসতেন। এ সময়ই ঘোড়াদের সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
একদিন তিনি ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যান, এবং তাঁর পা ভেঙে যায়। কিন্তু উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে পঙ্গু হয়ে যান। বাকী জবিন শয্যার উপর কাটান। এই সময় তিনি তাঁর একটি গল্পটি মুখে মুখে বলতে এবং তাঁর মা তা লিখে রাখতেন। তাঁর নিরানন্দময় জীবনে এই রচনার গতি ছিল অত্যন্ত ধীর, রচনা সম্পূর্ণ করতে প্রচুর সময় লেগে যায়।
১৮৭৭ সালে বইটি প্রকাশের পর পরই পাঠক সমাজে আদৃত হয়। তখন এ্যানার বয়স সাতান্ন। তিনি তাঁর ঐ বই প্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যে পরলোকে গমন করেন। তিনি জীবনে মাত্র এই এক খানি বই-ই রচনা করেন।
এ্যানা ঘোড়াদের আংটা লাগানো আঁটো সাঁটো লাগানোর অত্যন্ত বিরোধী ছিলেন। ঘোড়ারা এতে অত্যন্ত কষ্টবোধ করে এবং তাদের জীবনী শক্তির ক্ষয় হয়্ কিন্তু তাঁর মরদেহকে চার্চে নিয়ে যাবার জন্য যে গাড়িটি আসে সেই ঘোড়ার লাগামও ছিল আংটা লাগানো টান-টান করে বাঁধা। এটি তাঁর মায়ের চোখে পড়ে। এ্যানার আত্মার শান্তির জন্য ঐ ঘোড়ার লাগাম শিথিল করার পরই গাড়ি তঁঅর মরদেহ নিয়ে চার্চে যাত্রা করে।