প্রত্যেক গোষ্ঠী বা জাতির একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ বা চেতনা থাকে,আর এই মতাদর্শ আঁকড়ে ধরে রাখা ছাড়া কোন জাতির-ই অস্তিত্ব স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে না। আমাদেরও একটি মাসলাক বা মতাদর্শ রয়েছে,আর তা হচ্ছে দেওবন্দি মতাদর্শ/দেওবন্দি চেতনা।আমরা গর্বের সাথে বলি,আমরা দেওবন্দি। মাসলাক বা মতাদর্শের আলোচনা তিয়াত্তর ফেরকাসংক্রান্ত হাদিসে রয়েছে,যেখানে বলা হয়েছে, বাহাত্তর ফেরকা নারকীয় এবং বিশুদ্ধ আকিদার কারণে শুধু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত জান্নাতী। অবশ্য মানুষকে দীনের দিকে দাওয়াত দেয়া হবে। কিন্তু ভ্রষ্ট ফেরকার তরফ থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের পরিমিত মতাদর্শ দেওবন্দিয়াতের উপর আক্রমণ হলে এর প্রতিরোধ করা অপরিহার্য। বরং মাসলাকে দেওবন্দিয়াতকে সংশয় থেকেও রক্ষা করা আবশ্যক। যদি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীরা চুপ থাকেন এবং ভ্রান্ত ফেরকাসমূহের ভ্রান্তির মুখোশ উন্মোচন না করেন,তাহলে আখের হকের অনুগামীদের-ই ক্ষতি হবে। পথভ্রষ্ট ফেরকাসমূহ নিজেদের ভ্রষ্টতা প্রচার করতে থাকবে এবং আহলে হকের জন্য জমি সঙ্কীর্ণ হতে থাকবে। অনেকে বলে থাকেন,দীন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত,মতাদর্শ নাজিলকৃত নয়। যে বস্তুতে মানুষ্য গবেষণার অনুপ্রবেশ রয়েছে তা প্রাধান্যযোগ্য হতে পারে,কিন্তু তাবলিগযোগ্য হতে পারে না। তাদের এমন বক্তব্য কুরআন-হাদিসের বিপরীত। যদি মাসলাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের দাওয়াত দেয়া না হয় এবং ভ্রান্ত ফেরকার ভ্রষ্টতার মুখোশ উন্মোচন না করা হয় এবং সকল ফেরকার বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি দিয়ে দেয়া হয়,তাহলে ভ্রষ্টতা বিস্তৃতি লাভ করতে থাকবে এবং আহলে হক সঙ্কুচিত হতে থাকবেন। দারুল উলুম দেওবন্দ মাসলাকের দাওয়াত দেয় না। বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সুষম মাসলাকের সংরক্ষণ করে। চারটি মাজহাবও ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ। যখন-ই এই মতাদর্শের উপর আক্রমণ হয়েছে,তখন-ই দারুল উলুম দেওবন্দের আকাবিররা প্রতিরোধ করেছেন। চাই তা তাকলিদ অস্বীকার বা গোস্তাকে সাহাবার আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করুক অথবা হোক না কেন তা সুন্নাতের নামে বিদআতের সরূপে। আর এই মতাদর্শকে সংশয়মুক্ত রাখাও আবশ্যক। হাদিস শরিফে এসেছে; যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। এই হাদিস থেকে এ কথাও বোধগম্য যে,বিশুদ্ধ মাসআলাকে সংশয় থেকে রক্ষা করাও অপরিহার্য। অথচ আজ এ কথা অত্যন্ত জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে; “দাওয়াত শুধু দীনের দেয়া হবে,মতাদর্শের দাওয়াত দেয়া যাবে না। তিয়াত্তর ফেরকাসংক্রান্ত হাদিসে শুধু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতকে মুক্তিপ্রাপ্ত আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট বাহাত্তরকে জাহান্নামি আখ্যা দেয়া হয়েছে। সুতরাং তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্তি থেকে বাঁচা আবশ্যক। সঠিক মতাদর্শের উপর যারা হবেন,তার-ই মুক্তিপ্রাপ্ত হবেন। এছাড়া বাহাত্তর ফেরকার সাদৃশ্যতা থেকে বেঁচে থাকাও জরুরি। উল্লেখিত হাদিস থেকে এ কথাও বোধগম্য হয়। মোটকথা দেওবন্দি চেতনা কী ছিল? আমরা এর কতটুকু ধরলাম আর কতটুকু ছাড়লাম? ভ্রষ্ট ফেরকা সম্পর্কে আমাদের উদারতা কি আদৌ সুখকর? শোকসভা/আলোচনাসভার আয়োজন করা কি বৈধ? ইত্যাদি নানান সংশয়ের সমাধান পেতে "চেতনার মশাল" বইটি আমাদের সবাইকে পাঠ করা উচিত।