“প্র্যাকটিস অফ মডার্ন অ্যালপ্যাথিক চিকিৎসা" বইটির মুখবন্ধ এর লেখাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চিকিৎসা শাস্ত্রের যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। পূর্বে যেসব রােগ-ব্যাধি দুরারােগ্য ও দুরপণেয় বিবেচিত হতাে, বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাফল্যে ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সেসব রােগ-ব্যাধি প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন। অধিকন্তু রােগ-যন্ত্রণা অপসারণে ও উপশমে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। প্রাকতিক ও মানবসষ্ট কারণে বর্তমানে পথিবীর সার্বিক পরিবেশ দূষিত ও কুলষিত। এর ফলে সষ্টি হচ্ছে অসংখ্য নতুন নতুন অদ্ভুত ও অদৃষ্টপূর্ব রােগ-ব্যাধি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও নিশ্চিন্তে বসে নেই। তারাও সৃষ্ট ব্যাধির প্রতিষেধক ও চিকিৎসা-পদ্ধতি উদ্ভাবনে ও প্রতিকারকল্পে সচেষ্ট রয়েছেন। প্রতিনিয়তই প্রাচীন ও প্রচলিত এবং অত্যাধুনিক ব্যাধিগুলাের নিরাময়ক ঔষধাবলি আবিষ্কৃত হচ্ছে। এসব ঔষধের সামগ্রিক তালিকা সংগ্রহ করা বা এগুলাের ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। সেহেতু প্র্যাকটিস অফ মডার্ন অ্যালপ্যাথিক চিকিৎসা নামক পুস্তকে এসব ঔষধ, এদের কার্যকারিতা ও ব্যবহার পদ্ধতি সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় বিস্তৃত আলােচনা করা হয়েছে। চিকিৎসাশাত্রে অল্প জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরাও যাতে অতি অল্প সময়ে পারদর্শিতা লাভ করতে পারে। সেদিকে দৃষ্টি রাখা হয়েছে। প্রতিটি রােগের উৎপত্তিগত কারণ, লক্ষণাদি, উপসর্গ, অত্যাধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্ৰসম্মত চিকিৎসা ও তার প্রতিকার এবং প্রতিষেধক প্রভৃতি বিষয়ে সার্বিকভাবে আলােচনা করা হয়েছে। সাধারণ ব্যক্তিরাও যাতে কারণ ও লক্ষণাদি পর্যবেক্ষণ করে সঠিক রােগ নির্ণয় করে সঠিকভাবে চিকিৎসা করতে পারে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা হয়েছে। এ বইটিতে নতুন নতুন আবিষ্কৃত ঔষধ সংযােজন করা হয়েছে। আর কিছু কিছু প্রাচীন ঔষধ পরিত্যাগ করা হয়েছে যা আজকাল ব্যবহৃত হচ্ছে না। উল্লেখ থাকে যে বইটিতে পুরাতন বাংলা বানান পদ্ধতি পরিত্যাগ করে বাংলা একাডেমি প্রণীত অভিধান-এর নতুন বানান পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। এ বইটি রচনা করে দেশ ও মানব জাতির উন্নয়নে লেখকগণ এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।
অধ্যাপক ডা. এ.কে.এম ফজলুল হক। জন্ম ২৫ জানুয়ারি ১৯৫৮ সাল, পটুয়াখালি জেলার মির্জাগঞ্জ থানাধীন গাজিপুরা গ্রামে। ১৯৮২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এণ্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) থেকে সার্জারীতে এফসিপিএস লাভ করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে এক বছরের নিবিড় প্রশিক্ষণ নেন। ২০০০ সালে কলােরেক্টাল সার্জারী চিকিৎসায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি আমেরিকান সােসাইটি অব কোলন এণ্ড রেকটাল সার্জন্স কর্তৃক প্রদত্ত ইন্টারন্যাশনাল স্কলার এওয়ার্ড এ ভূষিত হন। উক্ত এওয়ার্ড বিশ্বব্যাপী (যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ব্যতীত) প্রতিযােগিতার মাধ্যমে প্রতিবৎসর শুধুমাত্র একজন সার্জনকে দেয়া হয়। অধ্যাপক ডা. হক এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় এবং বিশ্বব্যাপি সপ্তম সার্জন যিনি এই সন্মান অর্জন করেন। একই বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের লাহি ক্লিনিক (বােস্টন), ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক (ওহাইও), মায়াে ক্লিনিকে (মিনেসােটা) প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি ভিজিটিং লেকচার দেয়ার সুযােগ লাভ করেন। পাইলস, ফিস্টুলা, এনাল ফিশারসহ পায়ুপথের বিভিন্ন রােগ সম্পর্কে ইতােমধ্যে তিনি বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়ার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহন এবং বহুসংখ্যক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। ২০১১ সালের ১৯-২১ জুন ইতালীর রােমে বৃহদন্ত্র, পায়ুপথ ও তলপেটের রােগের উপর (4th World Congress of Coloproctology and pelvic diseases) চতুর্থ বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ডা. হক উক্ত সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তা (Invited Speaker) হিসেবে যােগদান করেন। উক্ত সম্মেলনে তিনি ৮ বৎসরে করা তার ২৫৬৫ টি লংগাে অপারেশনের (মলদ্বার না কেটে পাইলস অপারেশনের) অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। উক্ত সম্মেলনে পাইলসের সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির উপর গােল টেবিল (Round Table) বৈঠকে বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশ থেকে নির্বাচিত ১১ জন বিশেষজ্ঞ সার্জনের মধ্যে ডা. হক অন্যতম।