"হে আমার ছেলে" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা” ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ। মিসরের বিখ্যাত এক এলাকা ইসমাঈলিয়া। এখানকার এক টগবগে যুবক। যৌবন। ঠিকরে পড়ছিল তার আপাদমস্তকে। তারুণ্যের নেশা তাকে তাড়িয়ে ফিরে। তার সামনে হাজির হয় রঙের ফানুস। সময়ের ঘূর্ণয়মান চাকা তাকে নিয়ে যায় এক পান্থপথে। অচিন দ্বীপে। সেই পথে ছড়ানাে ছিটানাে যুবতী, ললনা, টাকা, নেশা আরাে কত্ত কী! কিন্তু এক অজানা আতঙ্ক তাকে পেছন থেকে ধাওয়া করতে থাকে। ধাওয়া করে সারাক্ষণ। যুবকের নাম মীম হামযা। আর দশজন যুবকের মতাে তার সামনেও রঙিন হয়ে ওঠে সমাজের গড্ডালিকা। প্রবাহ। তবে তার ভাগ্য ভালাে। সুপ্রসন্ন। অপার্থিব এক। শঙ্কা জন্মে তার হৃদে। তিনি ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা জানিয়ে একটি পত্র লিখেন যুগের বিখ্যাত এক নন্দিত আরবি কথাসাহিত্যিকের কাছে। যুবক মীম হামযা কথাসাহিত্যিক ড. শায়খ আলী তানতাবীকে জোর কসম দিয়ে বলেছিলেন তার চিঠি পড়তে ও উত্তর দিতে। তারই প্রেক্ষিতে শায়খ যে উত্তর প্রদান করেছিলেন তাই বাংলাভাষী পাঠকের করকমলে প্রদত্ত হলাে। "হে আমার মেয়ে" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা” বর্তমান সময়ের ফিতনা ও নানা পাপাচার থেকে নিজের দ্বীন-সম্ভ্রমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মেয়েদের প্রতি ড. আলী তানতাবীর হৃদয় নিংড়ানো কথামালা সংকলিত হয়েছে এ বইতে।
বিংশ শতাব্দীর এক সমাজচিন্তক দার্শনিক ড. শায়খ আলী তানতাবী। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেশক নগরীতে তাঁর জন্ম। পৈত্রিক আবাস মিসরের তানতা শহর হওয়ায় তানতাবী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ছাত্রজীবনেই তুখােড় মেধার কারণে তিনি গবেষক শিক্ষকগণের দৃষ্টি কাড়েন। সেকালে গবেষণা ও জ্ঞানসাধনায় তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ঈর্ষণীয়। সেই পরিবারেই তিনি ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করে ঐতিহ্যের তিলকে সােনার প্রলেপ আঁটেন। সতেরাে বছর বয়স। থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প প্রকাশ হতে থাকে। ১৯৩৬ সালে সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ইরাক গমন করেন। সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পর দামেশকে ফিরে এসে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে যােগ্যতার সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। আর লেখালেখি! সে তাে তার নেশা। এ নেশা তার মজ্জার সাথে মিশা। একটু সময় পেলেই এ চিন্তাবিদ কাগজ কলম হাতে লিখতে বসে যেতেন। তাঁর জ্ঞানের নিগুঢ় চশমায় ধরা পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা অসঙ্গতির কালাে পাহাড়। সেই অমানিশা দূর করতে তিনি। জ্বালান নানান রঙের জ্ঞানের মশাল। সেই আলােয় বিদুরিত হয় শত প্রকারের। আঁধার-অজ্ঞানতা; সম্বিৎ ফিরে পায়। হতাশাচ্ছন্ন জাতি। গবেষণামূলক লেখালেখির খ্যাতির মধ্য দিয়ে তিনি মক্কা মােকাররমা শরিয়া কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধানমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখা, বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ প্রণয়ন আর বিভিন্ন মাদরাসা-কলেজে দরসদানও চলতে থাকে সমান গতিতে। ১৯৯৯ সালে ৯০ বছর বয়সে এ শায়খ মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন।