"সুবক্তা হওয়ার কৌশল" বইটির মুখবন্ধ অংশ থেকে নেয়াঃ মােহাম্মদ বশীরুদ্দীন এ বইটি লিখেছেন অভিজ্ঞতা ও প্রয়ােজনবােধ থেকে। শিক্ষকতার সাথে যুক্ত থেকে তিনি লক্ষ্য করেছেন যে আমাদের শিক্ষার্থীরা কথার মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রকাশ করতে সংকোচ বােধ করে ও অসুবিধার সম্মুখীন হয়, এবং চিন্তা করেছেন কিভাবে তাদেরকে সুবক্তা হতে সাহায্য করা যায়। বক্তা বলতে তিনি কেবল সভায় দাঁড়িয়ে যারা বক্তৃতা করে তাদেরই বােঝন নি, তাদেরকেও বুঝিয়েছেন যারা অংশ নেয় বিতর্কে ও আলােচনায়, এমন কি কথােপকথনেও। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। এক সময়ে শিক্ষা বলতে বুঝাতাে কেবল ক্ষতি ও স্মৃতি। অভাব ছিল পড়বার বইয়ের এবং লেখবার কাগজের। পরে পড়া এসেছে, লেখাও এসেছে। কিন্তু গুছিয়ে কথা বলাটা তেমন আসেনি। এই না আসার ঐতিহাসিক কারণ আছে। সেটা হলাে রাজনৈতিক পরাধীনতা ও পর-নির্ভরতা। পরাধীনতা শিক্ষার্থীদেরকে উৎসাহ কিংবা সাহস দেয়নি মতামত ব্যক্ত করতে। উন্নতির উপায় ছিল নিজের বক্তব্যকে লুকিয়ে রেখে কর্তা যা বলেন তার প্রতিধ্বনি তোেলা, এবং চাটুকারিতায় অংশ নেওয়া। পর-নির্ভরতাও ছিল পদে পদে; অর্থনৈতিকভাবে ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত অধিক পরিমাণে অপরের উপর নির্ভরশীল। পরাধীনতা গিয়েও যায় নি, এবং পর-নির্ভরতা এখনও রয়ে গেছে। বশীরুদ্দীন জোর দিয়েছেন অনুশীলনের ওপর। সুবক্তা হতে হলে প্রথম যে বস্তুর প্রয়ােজন সেটি হলাে ভেতরে বস্তু থাকা। এই বস্তুজ্ঞান ও চিন্তা কিন্তু কখনাে আত্মসম্পদে পরিণত হয় না যদি না তাকে প্রকাশ করা হয়। আবদ্ধ জ্ঞান স্বাস্থ্যহীন বটে, ক্ষীণ হতে হতে সে অবলুপ্ত হয়ে যায়। আর চিন্তাতাে সম্ভবই নয় যদি ভাষা না থাকে। সে জন্য লেখার ও বলার নিরন্তর অনুশীলন দরকার। এ বইতে লেখক বলার দিকটা নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর পরামর্শ শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে।