"মহানির্মাণ" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষে শতকাজের ভিড়ে অমিত গোস্বামীর মহানির্মাণ এক ব্যতিক্রমী যোজনা। শেখ মুজিবের কলকাতা জীবন অর্থাৎ তাঁর উন্মেষপর্বকে উপন্যাসের অবয়বে নতুন মাত্রিকতা দিয়েছেন সময়ের এই দায়বদ্ধ কথাশিল্পী। শরৎচন্দ্রের পথের দাবী উপন্যাসের উল্লেখে অমিত গোস্বামীর উপন্যাসের শুরু। তাৎপর্যপূর্ণ এই সূত্রপাত কেননা মানুষের মুক্তির জন্যে পথের দাবী’র চরিত্রদের মতোই শেখ মুজিব প্রায় সারাটা জীবন কাটিয়েছেন রাজপথে-জনপথে। গোপালগঞ্জ থেকে ফরিদপুর, ফরিদপুর থেকে কলকাতা, কলকাতা থেকে ঢাকা; বাংলার বিচিত্র নগরে-বন্দরে মুজিবের পরিক্রমাকে সূত্রবদ্ধ করেছেন অমিত যেখানে চরিত্র হিসেবে এসেছেন মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ইসলামিয়া কলেজের পাঠ-প্রাঙ্গণ থেকে দাঙ্গাধ্বস্ত কলকাতার সড়কে-ময়দানে লড়াকু ও মানবিক মুজিবকে চাক্ষুষ করা যায় এই উপন্যাসে। লেখকের দৃষ্টি সর্বতোবাদী তাই কলকাতা-দাঙ্গার সঙ্গে অনুল্লেখ্য থাকে না সাম্প্রদায়িক ছোবলে তছনছ হওয়া নোয়াখালির মাঠঘাটও। সাতচল্লিশের দেশভাগের মধ্য দিয়ে ভারত, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার তথ্যে উপন্যাসের পরিসমাপ্তি যদিও এ সমাপ্তি আরও বহু শুরুর আভাষই বটে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এই উপন্যাসের বিশ্বস্ত ভিত্তি হলেও ঔপন্যাসিকের সঙ্গত স্বাধীনতায়, মমতাময় কথাবুননে আর ভাষা-সাবলীলে অমিত গোস্বামীর মহানির্মাণ হয়ে উঠেছে ‘বঙ্গবন্ধ’নামক মহাজীবনের অনিবার্য অধ্যায়ের এক সংবেদী-সৃজনী ভাষ্য যা নিঃসন্দেহে হয়ে উঠবে বাঙালি মাত্রেরই প্রিয়পাঠ্য।