মফস্বল শহরের এক প্রত্যন্ত জনপদ কাঞ্চনপুর। এই অঞ্চল থেকে শুভ্রা নামে একটি মেয়ে টিকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়। গোটা কাঞ্চনপুরে এই প্রথম কোনো মেয়ে ভর্তি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর শুরু হলো বিশাল ঢাকায় শুভ্রার এক সংগ্রামী জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট পাওয়ার সংগ্রাম, কাঞ্চনপুর বাজারে সামান্য ঘড়ির দোকানদার বাবাকে আর্থিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে টিউশনিতে জড়ানো, ঢাকার আধুনিক জীবনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পদে পদে নতুন অভিজ্ঞতাÑএসবের মাঝেই শুভ্রার জীবনে আসে প্রেম। পরিচয় ঘটে আমেরিকার এমআইটি থেকে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশা ফেরা অভিজাত পরিবারের সন্তান পিয়ালের সঙ্গে। একই সঙ্গে কাঞ্চনপুর বাজার থেকে শুভ্রার বাবার ঘড়ির দোকান দখল করে তাকে উৎখাত করতে একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান খালেক মন্ডল। অথচ এই একটি ঘড়ির দোকানের আয় দিয়েই গোটা সংসার চলে শুভ্রাদের। শুভ্রার পড়ালেখার খরচ আসে এ দোকান থেকে। স্বপ্ন পূরণে রাজধানী ঢাকায় শুভ্রার টিকে থাকা এবং তার জীবনে আসা প্রেমÑএকই সঙ্গে কাঞ্চনপুর বাজারে টিকে থাকা শুভ্রার বাবার জীবন সংগ্রাম সমান্তরাল এগিয়ে চলে। শুভ্রার বাবাকে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলেও শুভ্রা হার মানে না। শুভ্রা এগিয়ে যায় ক্রমশ তার লক্ষ্যের দিকে। আর তার পাশে এসে দাঁড়ায় এক আশ্চার্য যুবক পিয়াল হাসান। মূলত মফস্বল শহর থেকে রাজধানীতে পড়তে আসা শুভ্রা নামে এক তরুণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট পাওয়ার লড়াই, রাজধানীতে তার টিকে থাকার সংগ্রাম, ধীর পায়ে এগিয়ে আসা প্রেম এবং শেষ পর্যন্ত তার অনিবার্য পরিণতির কাহিনি নিয়ে উপন্যাস ‘অন্তহীন’।
শূন্য দশকের একজন উল্লেখযোগ্য লেখক ইমন চৌধুরী। এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। জন্ম ১৮ জুন। নোয়াখালীর মাইজদী সরকারি কলোনিতে। পিতা মফিজুর রহমান চৌধুরী’র সরকারি চাকরির সুবাদে শৈশবের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে এখানে। মা দেলোয়ারা বেগম গৃহিনী। পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার পৈথারা গ্রামে। ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রথম আলো পত্রিকার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় সাপ্তাহিক রম্য ও বিদ্রুপ ম্যাগাজিন ‘আলপিন’-এর মাধ্যমে প্রথম হাজির হয়েছিলেন পাঠকের সামনে। এরপর ইত্তেফাক, সমকাল, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব সংবাদপত্রেই নিয়মিত লিখেছেন। লিখছেন এখনও। সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে রম্য ও বিদ্রুপ লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ইমন চৌধুরী জীবনঘনিষ্ঠ গল্প-উপন্যাস লিখতেই বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রথম প্রকাশিত বই ‘লাল পাড় সাদা শাড়ি’। প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘মেঘের কাছে রোদের কাছে’। উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে ‘পাশের মানুষ’, ‘পায়ে তার কাচের নূপুর’, ‘এই বসন্তে এসো’, ‘রোদ পড়েছে ডানায়’, ‘ডেকে যায় ফাল্গুনের রোদ’, ‘অন্তহীন’ অন্যতম। লেখালেখির সূত্রেই পেশাগত জীবনে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতা। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় জৈষ্ঠ সহ-সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। জীবন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। রোগ, শোক, মহামারী, অনিশ্চয়তার এই মানব জীবনে মহাকালের কাছে কিছু গল্প জমা রেখে যেতে চান কেবল।