"ফ্রেন্ডস ক্লাব আনলিমিটেড" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: দিন দিন বদলে যাচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনাচরণও। বিশেষ করে তরুণ-সমাজের পরিবর্তন চোখে পড়ার মতাে। পরিবর্তনের সে দোলার ঘূর্ণাবর্তে পড়ে কোনাে যুবা হয় লণ্ডভণ্ড, কেউ হয় বিপর্যস্ত আবার কেউ মানিয়ে নিয়ে খুঁজে ফেরে দিশা। আবার ভিন্ন চিত্রেরও মেলে দেখা। সে চিত্রে দেখা যায় একজন কাণ্ডারিকে, যিনি শক্ত হাতে হাল ধরে পথভ্রান্ত যুবাকে দেন দিশা, তারুণ্যের নড়বড়ে অস্তিত্বকে সবল করতে নেন নানা পদক্ষেপ। সেসব পদক্ষেপ নিতে গিয়ে তাকে আবার নানা জটাজালের মুখােমুখি হতে হয়। তাতে তার মন ভাঙলেও আশার প্রদীপ তাকে অন্ধকারে আলাে দিয়ে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। তেমনই এক চরিত্রের দেখা মেলে মােস্তফা মামুনের ফ্রেন্ডস ক্লাব আনলিমিটেড’-এর বুননশৈলীতে। পেশায় সাংবাদিক মােস্তফা মামুন সাহিত্যাঙ্গনে নিজ প্রতিভায় এক উজ্জ্বল নাম। ব্যতিক্রম গল্প আর উপন্যাস লিখে পাঠকমানসে এরই মধ্যে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর গল্প কিংবা উপন্যাস পাঠ করলেই বােঝা যায়, এটি মামুনের লেখা। তাঁর লেখায় যেমন আছে নাটকীয়তা, ব্যঙ্গরস, তেমনি আছে যাপিত জীবনের গূঢ়-রহস্যও। আর সেসব নির্ণয়ে তিনি বেশ কৌশলীও বটে। ফ্রেন্ডস ক্লাব আনলিমিটেড’ পাঠে সেসবেরও সন্ধান মেলে। যেখানে সিরাজি ভাই নামের এক অগ্রদুত মানুষ তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন সুন্দর আগামীর, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। যদিও মানুষটিকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সঙ্গে নিত্য যুঝতে দেখা যায়। তারপরও তাকে লক্ষ্য থেকে চ্যুত হতে দেখা যায় না। বলা হয়ে থাকে সাহিত্য জীবনের প্রতিচ্ছবি। তাই সাহিত্যে যেসব চরিত্রের সমাবেশ ঘটে, তারা আর কেউ নয়, তারা আমাদের সমাজেরই চেনা মানুষের প্রতিচিত্র। মােস্তফা মামুনের সৃষ্টি ‘সিরাজি ভাই' চরিত্রটিও তেমনই এক চরিত্র, যাকে দিয়ে লেখক তরুণদের উজ্জীবিত করতে সদা সচেষ্ট। মামুন লিখেছেন- সিরাজি ভাই গলা আরাে মােলায়েম করেন। এতটা যে রীমার একটু হাসি পেয়ে যায়। যে সিরাজি ভাই ধমক ছাড়া কথা বলেন না তার এই রূপান্তর সত্যিই দেখার মতাে। কিন্তু তাতেও খুব একটা সুবিধা হয় না কারণ বাবা এবার চক্ষুলজ্জারও ধার না ধেরে বলেন, 'আপনাকে চা-ও খাওয়াতে পারব না। আপনি যেতে পারেন।’ ‘তা যাব। কিন্তু রীমাকে ক্লাবে যেতে না দিলে...' ‘না। রীমা আর ক্লাবে যাবে না। আমি অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম ওকে যেতে দেব না। যেখানকার ছেলেরা গুন্ডামি করে…’ ‘এটা কিন্তু আপনি ঠিক বললেন না। ওরা অনেক ভালাে কাজও করে। গতবার বন্যায় যখন পুরাে শহর ভেসে গেল তখন সবার আগে কিন্তু ওরাই দাঁড়িয়েছিল বন্যার্তদের রক্ষায়। এই মাত্র গত মাসেও আমরা ফ্রি মেডিক্যাল করলাম।’ পাঠক নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন সিরাজি ভাই একটি ক্লাব পরিচালনা করেন। আর তার সাথে রয়েছে একদল তরুণ-তরুণী। এই তরুণ-তরুণীদের নিয়েই তার স্বপ্নের জাল বুনে চলেন তিনি। যে স্বপ্নে বিরাজ করে একটি সুন্দর সমাজ, তারুণ্যের শক্তি আর আগামীর ভবিষ্যৎ। ক্লাব মানেই যে কেবল বিনােদন আর আড্ডাস্থল নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতাও তাতে জড়িয়ে, মােস্তফা মামুন তার ‘ফ্রেন্ডস ক্লাব আনলিমিটেড’ উপন্যাসের সিকুয়েলে সেটিই ঘটনাপরম্পরায় তুলে ধরেছেন। যেখানে প্রেম-বিরহ, বন্ধুতু-শত্রুতা একে একে জড়াে হতে দেখা যায়। পাশাপাশি অতলে তলিয়ে না গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানাের সংকল্পেরও সন্ধান মেলে। আর সিরাজি ভাই! তিনি এ সবকিছুকে লহমার পর লহমায় সমাধা করে অনুপম এক উজ্জ্বলতায় উদ্ভাসিত। যেখানে তার আমিত্ব অন্যদের ছুঁয়ে যায় অনুক্ষণ। সে কেবল দেশ নয়, বিদেশের মাটিতেও। তরুণদের প্রিয় সিরাজি ভাই তাই তাে উপন্যাসের পরতে পরতে কেবল সৃষ্টি করে চলেন বিস্ময় আর বিস্ময়। উপন্যাসের চরিত্রদের মতাে পাঠকও যেনবা কুঁদ হয়ে পড়ে তার মায়াজালে।
Mustafa Mamun বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় ছিল আইন। কিন্তু আইনজীবী আর হওয়া হয়নি। এমন আরো অনেক না হওয়ার ভিড় পেরিয়ে যতসামান্য যা হয়েছে তার পুরোটাই লেখালেখিকেন্দ্রিক। লেখক এবং সাংবাদিক, আপাতত এটাই নামের পাশের পরিচয় । জন্ম মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। তারপর সিলেট ক্যাডেট কলেজের রোমাঞ্চকর জীবন। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সম্মান প্রথম বর্ষ থেকেই ক্রীড়া সাংবাদিকতা নামের দারুণ আনন্দময় এক পেশায় জড়িয়ে পড়া। খেলা দেখতে আর লিখতে ভ্ৰমণ করা হয়ে গেছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, দেশ। বন্ধু-আডডা-মানুষ এসব নিয়ে মেতে থাকতে ভালো লাগে। বই পড়া, খেলা দেখাও আছে পছন্দের তালিকায়। কিন্তু সব ছাপিয়ে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে পছন্দের কাজ লেখা। এই নিয়ে চলছে জীবন। ভালোই তো চলছে!