“হ্যাঁ, দুনিয়ার অধিকাংশ নামকরা ইউনিভার্সিটিতে ফিলোসফি নামক সাবজেক্টটাই নাই। ইনফেক্ট, দুনিয়ার খুব কম সংখ্যক মানুষই ফিলোসফি নামক সাবজেক্ট নিয়ে পড়েছেন। তাই, পাত্তা পাওয়ার দিক থেকে, উন্নয়ন ও জব মার্কেটে ডিমান্ডের দিক থেকে, বলতে পারেন, এটি টোটালি লাপাত্তা এক ‘জিনিস’। তবে, ফিলোসফি এক আজীব ‘জিনিস’। যাকে খণ্ডন করতে তাকেই লাগে। যাকে বাদ দিতে গেলেও তাকে লাগে। যাকে ফেলে দিয়ে আসলেও, এমনকি কবর দিয়ে আসার পরেও ঘরে এসে দেখতে হয়, আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য সে সেজেগুঁজে হাসিখুশি দিব্যি বসে আছে। কেমন ধরনের এক আশ্চর্য ব্যাপার-স্যাপার! ফিলোসফি আসলে কী? এক কথায় বললে, ফিলোসফি হলো যুক্তির খেলা কিংবা ব্যবহার। এর ইনহারেন্ট টেনডেন্সি হলো, মানুষকে ক্রমান্বয়ে জীবনের বৃহত্তর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে ইনভলভ করা। হ্যাঁ, আপনার কথাই সঠিক, ফিলোসফি কিছু বানায়নি। দেশের জিডিপিতে ফিলোসফির অবদান শূন্য। উল্টো, দার্শনিকদের পালতে গিয়ে দেশের ঘাটতি-বাজেটের খানিকটা বৃদ্ধি ঘটে। তবে, ফিলোসফি একটা কিছু বানিয়েছে। বিশেষ একটা কাজ সে করেছে। শুনবেন? কিংবা অস্বীকার করবেন? ফিলোসফি মনুষ্য সদৃশ্য দ্বিপদী একটা প্রাণীকে আজকের এই মানবিক মর্যাদায় উন্নীত করেছে। সোজা কথায়, ফিলোসফির কারণে মানুষ মানুষ হতে পেরেছে। ফিলোসফি কিছু বানায় নাই, কিন্তু সবকিছু বানিয়েছে যে মানুষ, সে মানুষ কিন্তু মানুষ হতে পেরেছে ফিলোসফির কল্যাণে। ফিলোসফির তাড়নায় মানুষ গুহা হতে বের হয়ে এসে সভ্যতা গড়ে তুলেছে। এক অজ্ঞাত কিন্তু প্রবল অনুসন্ধিৎসা তাকে আজকের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।” ‘ফিলোসফি: প্রাথমিক ধারণা’ বইটিতে লেখক এমন সাবলীল ভাষায় ফিলোসফির সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। হয়তো কৌতুহলের বশে ফিলোসফি বুঝতে গিয়ে ফিলোসফির কোনো একটা টেক্সট বই পড়তে শুরু করেছেন। তারপর জটিলসব পরিভাষার সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ক্ষ্যান্ত দিয়েছেন। কিংবা, জটিলতার ভয়ে বিষয়টির ধারেকাছেও ঘেঁষছেন না, আবার মনের ভেতর কৌতুহলটাও বয়ে বেড়াচ্ছেন। এমনসব আগ্রহী পাঠকের জন্য এই বইটি লেখা হয়েছে। লেখককে বিভিন্নজন মেসেঞ্জারে প্রশ্ন করেছেন, তিনি সেগুলোর জবাব লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন– এভাবেই বইটির অধিকাংশ কন্টেন্ট লেখা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের গৎবাঁধা পদ্ধতি কিংবা ধারাবাহিকতার কোনোটাই এতে অনুসরণ করা হয়নি। ফলে পাঠক এক ধরনের বৈচিত্র্যতা পাবেন বইটিতে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক। তিনি মূলত জ্ঞানতত্ত্ব ও অধিবিদ্যার নানান বিষয় পড়ান। একটি নতুন ধারার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ এবং ‘মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র’ নামে দুটি উদ্যোগ গড়ে তুলেছেন।