"অর্ধবৃত্ত"বইটির প্রথম ফ্লাপের কিছু কথ: ‘তুমি আমাকে ভালােবাসােতাে? হ্যা বাসি। ‘কেন ভালােবাসাে? ‘অন্যরা যেমন বলে তেমন করে বলব, নাকি সত্যটা বলব? অন্যরা কেমন করে বলে? ‘এই ধরাে, ভালাে লাগে বলে ভালােবাসি। তােমার মতাে করে আমাকে আর কেউ বােঝে না। এইসব। তা তুমি কী বলবে? ‘আমি যেটা বলব, সেটা শুনলে তােমার খারাপ লাগবে।' মুনিয়া আচমকা যেন শক্ত হয়ে গেল। রাফির সঙ্গে তার সম্পর্কের সমীকরণটা গােলমেলে, যুক্তিহীন, বেহিসেবি। সে নিজেও জানে না অসম বয়সের এই তুমুল বিপজ্জনক সম্পর্কটা কেমন করে এই অবধি এলাে! মুনিয়া বলল, বলাে, শুনি? রাফি বলল, শরীরের জন্য। মুনিয়া যেন অকস্মাৎ কথাটা বুঝতে পারল না। তবুও তার সারা শরীর ঝিমঝিম করে উঠল। সে আর্তনাদের স্বরে বলল, কী! রাফি শান্ত এবং স্থির কণ্ঠে বলল, তােমার শরীরের জন্য আমি তােমাকে ভালােবাসি। মুনিয়া জানে না সে কী বলবে! তার কেবল মনে হচ্ছে। তার চারপাশের চেনা জগৎ, চেনা মানুষ, চেনা জীবন সকলই কাচের দেয়ালের মতাে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে। সে জানে, সে আয়নায় প্রসাধনীবিহীন মুখের রেখা আড়াল করতে চায়। কিন্তু পারে না। পলাতক প্রেমিকের মতােই ক্ষতচিহ্ন রেখে যাচ্ছে পলাতক সময়। পুরুষের কাছে ফুরিয়ে আসছে তার শরীরী আয়ু। রাফির কাছেও! দূরে তখন সূর্য ডুবছে। ফুরিয়ে আসছে আলাে। নিস্তেজ হয়ে আসছে ঝাঁজালাে দিন। খানিক বাদেই অন্ধকার নামবে। মুনিয়ার নিজেকে হঠাৎ ওই অস্তগামী সূর্যের মতাে মনে হতে লাগল। বিষন্ন, নিষ্প্রভ, একা। লেখকের কিছু কথা: জীবনের সবচেয়ে সহজ এবং জটিল সমীকরণের নাম সম্পর্ক। মানুষ জন্মায় সবচেয়ে সহজ সম্পর্ক নিয়ে। যেখানে ভান নেই, কপটতা নেই, জটিল সব হিসেব-নিকেশ, সমীকরণ নেই। কিন্তু বাকিটা জীবন সে জটিল থেকে জটিলতর সম্পর্কের গলিখুঁজিতে ঘুরে বেড়ায়। এই সময়ে সে সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্ত হতে থাকে। তার কেবলই মনে হতে থাকে, সে তার চারপাশের জগত্তাকে চিনতে পারছে।কিংবা চিনতে পারছে না নিজেকেই। সম্পর্কের সংযােগ থেকেই শুরু হয় নানাবিধ সংকট। যে চার দেয়ালের ঘর বন্ধন তৈরি করে, সেই দেয়ালই আবার হয়ে ওঠে বিভেদের বেড়াজাল। তাহলে ‘অর্ধবৃত্ত’ আসলে কী? অর্ধবৃত্ত মূলত সেইসব সম্পর্কের সংযােগ, সংকট ও সমীকরণের গল্প। দেয়াল ও দ্বিধার গল্প। বিভেদ ও বন্ধনের গল্প। যার আদ্যোপান্ত জুড়ে রয়েছে জীবন। সম্পর্ক যদি জীবনের কেন্দ্র হয়, জীবন তবে বৃত্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই জীবন কী, পূর্ণ না অর্ধবৃত্ত? শেষের ফ্লাপের কিছু কথ: মহা বিপদ সংকেত! ঠিক এই মুহূর্তে পৃথিবীর প্রায় ১০ লাখ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে। ৪০ শতাংশেরও বেশি উভচর প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। ৮৫ শতাংশেরও বেশি জলাভূমি হারিয়ে গেছে। বন ধ্বংস হচ্ছে অবিশ্বাস্য ভয়াবহতায়। জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়ে । বলেছে যে, পৃথিবীর প্রায় চার ভাগের একভাগ প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে মানুষের অপরিকল্পিত উন্নয়ন। কর্মকাণ্ডের ভয়াবহতায়। প্রকৃতির এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মূল কারণ মূলত মানুষ। এখুনি সময় সতর্ক হওয়ার। এই মুহূর্তেই... যেদিন পৃথিবীর শেষ গাছটি কেটে ফেলা হবে, শেষ মাছটি ধরে ফেলা হবে। শেষ নদীটির জলও বিষাক্ত করে ফেলা হবে। শুধু সেদিনই মানুষ বুঝবে, টাকা খেয়ে বাঁচা যায় না...
স্নাতকোত্তর, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তাঁর কাছে চারপাশের জীবন ও জগত, মন ও মানুষ সকলই গল্প। তিনি মনে করেন, সিনেমা থেকে পেইন্টিং, আলোকচিত্র থেকে ভাস্কর্য, গান থেকে কবিতা- উপন্যাস-নাটক, সৃজনশীল এই প্রতিটি মাধ্যমই মূলত গল্প বলে। গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন- আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, মেঘেদের দিন ও অর্ধবৃত্তের মতো তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘কাজল চোখের মেয়ে’, তোমাকে দেখার অসুখ'সহ দারুণ সব পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বোধ, দ্য শুজ, প্রযত্নের পাশাপাশি' নির্মাণ করেছেন 'গহীনের গান' এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চমিবঙ্গের চোখ সাহত্যি পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক- অন্যদিন হুমায়ূন আহমদে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯। তাঁর জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার, কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে।