"লাল ডায়েরি" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ২০২৫ সাল। অনিন্দ্যসুন্দর নিকিতাকে কখনােই ভালােলাগা, ভালােবাসা আর স্বপ্নের কথাগুলাে বলতে পারবে না বলেই লাল ডায়েরিতে মনের কথাগুলাে চিঠিরূপে লিখে রাখে ভার্সিটির ছাত্র নিঝর। সে বােঝে অস্কারজয়ী বাংলাদেশের একমাত্র নায়িকা নিকিতা আর তার মধ্যে কত কত দূরত্ব! নিকিতা যে তার ডায়েরিটাও কোনােদনি পড়বে না তাও সে জানে। আর এই জানা এবং উপলব্ধির কারণেই নিকিতাকে নিয়ে মনের গােপন ইচ্ছে আর বাসনার কথাগুলাে সে মনের মাধুরী মিশিয়ে লাল ডায়েরিতে লেখে। লেখে কল্পনার নিকিতাকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা, দিকহীন অজানা গহিন অরণ্যে হারিয়ে যাওয়ার কথা, পূর্ণিমা রাতে ভরাজোছনায় হাত ধরে হাঁটার কথা, দুর গ্রামে হিজলতলায় বসে রিমঝিম বৃষ্টি দেখার কথা, বসন্তের ঝিরঝিরে বাতাসে নিকিতার রেশমি চুলের স্পর্শ অনুভবের কথা, লাল-নীল নানা রঙের ছােটো ছােটো স্বপ্ন ভালােবাসার কথা, এমনকি কোথাও নীরবে নিভৃতে একটি রাত কাটানাের কথাও। ঘটনাক্রমে নিঝরের লাল ডায়েরিটি একদিন নিকিতার হাতে গিয়ে পড়ে। পরের দিনই নিকিতার ম্যানেজার এসে নিঝরকে একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে নিকিতা নিঝরের ইচ্ছেপূরণের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। জানায় এক মাস পর সে সত্যি কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে নিঝরের সাথে একটি রাত কাটাতে চায়। বোকের মাথায় নিঝর সম্মতি দেওয়ার পরই বুঝতে পারে কী ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে! শর্তগুলােকে সে যত সহজ মনে করেছিল বাস্তবে সেগুলাে অনেক অনেক কঠিন। তাইতাে আবেগ, উত্তেজনা, অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তায় পাগল হওয়ার মতাে অবস্থা হয় তার। অস্থির নিঝর এক সময় সিদ্ধান্ত নেয় নিকিতার সাথে সে দেখা করবে না। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ নিঝরকে লেখা নিকিতার চিঠিগুলাে আবার তাকে উজ্জীবিত করে তােলে। অবশেষে আসে রহস্যে ঘেরা বহু অপেক্ষার সেই রাত। কী ঘটেছিল ঐ রাতে? আর কিইবা ছিল নিকিতার শর্তগুলাে? আর সমাপ্তিটাই বা কী ছিল?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।