"মীরাশি" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি যখন কোনো কবিতায় প্রকাশ করার নিমিত্তে শব্দকে যুগলবন্দি করা হয় তখন তার অর্থ নতুনভাবে প্রকাশ পায়। এ অর্থ সমাজে বিরাজমান রূপরেখার আদলে কোনো এক সংস্কৃতিকে আগলে রাখার নিমিত্তে গঠিত জীবন বোধের সূচনা। বাস্তবতাই জীবনের স্পৃহা ও আত্মার পরিশুদ্ধতার পরিচায়ক। আমরা যখন মনুষ্যত্বহীনতার বেড়াজাল থেকে নিজেদের মানুষের মাঝে মনুষ্যত্বধারী সামাজিক জীব হওয়ার নিমিত্তে সকাল বিকাল কাজ করে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াই সব কিছু শেষে আপন নীড়েই ফিরতে হয় নতুনভাবে। স্মৃতিই হয়ে ওঠে জীবনরেখার মূল হাতিয়ার। আমরা স্মৃতিতে বাঁচি, স্মৃতিতেই গড়ি ভবিষ্যৎ। ------------------------------------------------------------------------------------- ভূমিকা জীবন আছে বলেই মানুষ আজ সংগ্রামী। জীবিকার তাগিদে ছুটতে হয় দিগি¦দিক। সম্পদ অর্জন ও ভোগের প্রতি মোহ মানুষকে করে তুলে স্বার্থপর, হয়ে ওঠে সে অত্যাচারী। মীরাশি এমনি এক অত্যাচারের থাবা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন যুগের পর যুগ। একজন নারী হয়েও প্রতিবাদের বলিষ্ঠ ভূমিকায় ছিলেন আপোসহীন। নারীরা সমাজে সব সময় যেসব লাঞ্ছনার শিকার হয়ে মুখ বুজে থাকে, তিনি তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। আজকাল দেশে, সমাজে এমনকি পরিবারে প্রতিটি অবস্থায় নারীরা অবহেলিত। সে অবস্থা থেকে নারীদের বের করে নিয়ে আসার জন্য মীরাশি একজন বাস্তব দৃষ্টান্ত। কবিতা যেমন জীবনের কথা বলে তেমনি বাস্তবতার খেলায় মগ্ন থাকতে পছন্দ করে, সেই অবস্থার মাঝেই মীরাশির সৃষ্টি। স্বপ্নকে জীবন বাস্তবতার ছন্দে ফিরিয়ে আনা ও নতুন ভাবনার খোরাক তৈরি করার ক্ষেত্রে কবিতা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। কবিতায় বাস্তবতা আর জীবনের বাস্তবতা একে অপরের সম্যক ধারণা বলে আমার বিশ্বাস। সমাজ সংস্কারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। মনুষ্যত্ববোধ তৈরি করা একজন মানুষের নৈতিক অধিকার ও দায়িত্ব। এটা বিকাশের মাধ্যমে সমাজ থেকে যাবতীয় অনাচার দূর করা সম্ভব হয়। কবি ও কবিতা জীবন চেতনা সৃষ্টিতে, মূল্যবোধ তৈরিতে, মনুষ্যত্ব বিকাশ ও বাস্তবতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাহিত্যের মূলধারা কবিতা থেকে সৃষ্টি। কবিতার মাধ্যমে মানুষের জীবনধারা, কৃষ্টি কালচার, অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের মূল্যবোধ তৈরিতে সহায়ক বলে ধরা হয়। বেঁচে থাকতে হলে সবাইকে কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার জন্য কাজই হলো বড় সংগ্রাম। সংগ্রাম করে জীবিকা অর্জনের মাঝে যদি মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত থাকে মানুষ তখন সার্থক জীবন ধারণের পথে অগ্রসর হতে থাকে। সার্থক মানুষ হওয়ার প্রবণতাই মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে থাকে। অভাবগ্রস্ত আর অভাববোধ দুটি শব্দে অর্থনেতিক ও বাস্তবিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সমাজে এমন অনেক অভাবগ্রস্ত মানুষ আছেন যারা অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি সমাজে বেঁচে থাকার জন্য অভাববোধে আসক্ত কিছু হিংস্র ও বিবেকবর্জিত মনুষ্যত্বহীন মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলতে হয়। মীরাশি তেমনি এক অভাবগ্রস্ত সংগ্রামী চেতনার নাম। সমাজে সব সময় মীরাশিদের জন্ম হয় না। সমাজে কিছু পরিবর্তনের উদ্দেশে তাদের আবির্ভাব হয় নীরবে। মীরাশিকে নিয়ে লেখালেখির পেছনে সমাজ চেতনায় নতুন কিছু সৃষ্টির অভিপ্রায় কাজ করে। সমাজে নারীরা অনেক অবহেলিত। পুঁজিপতিদের হাতে এখনো জিম্মি সমাজের নারী অধিকার। এখনো অবাধে তারা বিচরণ করতে পারে না। অধিকার শব্দটি তারা ভুলে যাওয়ার মতো অবস্থা। নির্যাতনের হাত থেকে নারীদের মুক্তির অভিপ্রায়ে সমাজ চেতনার মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরিতে প্রতিটি স্তরে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। মীরাশি কবিতটিতে আমি সজ্ঞানে কোনো গোষ্ঠীকে আঘাত করতে চাইনি। জীবন, জীবিকা, মূল্যবোধ, মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব ধারায় যদি কোনো ইঙ্গিত প্রকাশ পায় তা অবশ্যই আমি মুছে দিতে অপারগ। এই বইটি প্রকাশনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে জানাই শ্রদ্ধা ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। মোজাফফর হোসেন ভূঁইয়া (ইনান) ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার কর্শা কড়িয়াইল ইউনিয়নে ঝিকরজোড়া গ্রামে মরহুম আব্দুল খালেক ভূঁইয়া ও রৌশন আরা’র নবম সন্তান। যার হাতেখড়ি নিজ গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ১৯৯৯ সালে আলহাজ ওয়াজেদুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান ও এমবিএ পাস করেন। তার রচিত আরও কাব্যগ্রন্থ ‘উদয়’ ও ‘মীরাশি’, উপন্যাস ‘স্বপ্ন নীল পাখি’ এবং প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মনুষ্যত্ব সাহিত্য ও রাজনীতি’ প্রকাশের অপেক্ষায়। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।