জীবন যখন নীচের দিকে টানতে থাকে সে অবস্থাতেও সব ভেঙেচুরে উঠে আসা যায়, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। মেয়েটা তাই করছে। সে কি এতোই দম বন্ধ জীবন যাপন করছিল। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে না গিয়ে কিংবা নিজ বিভাগের বন্ধু বান্ধবদের কাছে না গিয়ে কবে হয়তো তার মতো আবছা পরিচয় হয়েছিল এমন কোনও বন্ধুর কাছে নিঃসংকোচে চলে গেলো মেয়েটা। সে নিশ্চয়ই শূণ্যতার আনন্দময় অর্থবহতা খুঁজবে নাকি বাস্তবতাও দেখবে। কিভাবে ঐ শরীরে দুমড়ে মুচড়ে নিয়ে আসলো নিজেকে। অথচ কিছুক্ষণ আগেও বাসায় যাওয়ার জন্য কি ছটফটই না করছিল মেয়েটা। জীবনে প্রেমে পড়েছিলাম। বিচ্ছেদের নীল দংশনের পর অর্থাৎ যখন কেউ ছেড়ে গিয়েছে নিশ্চিত থাকতে পারিনি কেন, এরচেয়েও দুঃখের মুহূর্ত আমার সামনে আসবে। সহজ দিনগুলো সহজে পেড়িয়ে গিয়েছি কিন্তু কঠিন সময়গুলো এইযে ট্যাক্সি ভাড়াটা যদি পকেটে থাকা টাকার চেয়েও বেশী উঠতো সে কি করতো? জীবন হঠাৎ কেমন নিজেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ! কঠিন সময়েই নির্ধারণ করবে তুমি কে? টেলিভিশনের সেটের সামনে পান চিবাতে চিবাতে নিজ সোফায় বসে যে মানুষ খুব বড় বড় বক্তৃতা দেয়, অভ্র দিয়ে খুব বাহাদুরি করে দু'লাইন লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেয়, চায়ের দোকানে কত ধরণের দেশ, মানুষ, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, কলা, বিজ্ঞান নিয়ে প্রায়শই নিজস্ব অবুঝ যুক্তি ঝাড়ে, তাকে একটা টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে একই কথা বলতে বললে তিনি কি গুছিয়ে বলতে পারবে নিজেকে কিংবা পুলিশ যে রিমান্ড নেয় সেই একই ব্যক্তি যদি কখনও অযাচিত ভাবে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে নিজ রুমে পান চিবানোর মত করে দাঁত কেলিয়ে একই আচরণ করতে পারবে ! মনে হয় না। হয়তো শেষের বিষয়টা কঠিন সময়, যখন জীবনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে আসে। তখন যেকোনও ভাবে নিজেকে উদ্ধার করাই বড় বিষয়। মানুষ ছাড় দিতে যায়। কিন্তু কে কি ভাবলো সেটা না ভেবে স্থিরতা তখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অথচ অতসী তার পুরোই ব্যতিক্রম। স্থিরতার সাথে তার জেদ। এমন চিন্তা করতেই অতসী'র প্রতি অনাবিলের শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গেলো। দুপুরের খাবার খেলো একদম বিকেলে তারপর লম্বা গোসল। অনাবিলের মনে হয়েছে মেয়েটি পরে নিশ্চয়ই হলে উঠে যাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এতো সহজে হারবে না অন্তত। শেষের খুব নিকটে' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের এক দূর্ভাগা তরুণীর গল্প, যার শেষটা হয়ত হয় না। শেষ বলে নিশ্চয়ই কিছু নাই। অতসীর পরিণতি জানতে পড়ুন গোলাম মাওলা শাকিলের শেষের খুব নিকটে। আশাহত হবেন না এতোটুকু বলা যায় নিসন্দেহে।
গোলাম মাওলা শাকিল জন্ম: ১২ই অক্টোবর ১৯৮৯। জন্মস্থান: ডাকুয়াপাড়া, কুড়িগ্রাম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা: সেনের খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোগলবাসা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকাশিত উপন্যাস: ডানায় ভালবাসার রোদ (২০১৭), প্রথম সকাল (২০১৮), শেষের খুব নিকটে (২০২০), সুতপা (২০২১) সাহিত্য পুরস্কার: প্রতিদিনের সংবাদ ‘সেরা গল্পকার পুরস্কার ২০১৮’।