”ভারতমাতা” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ‘জাতীয়তাবাদ নিয়ে বর্তমানের বিতর্কে ইতিহাসের গুরুত্ব আছে বইকী’— লিখেছেন সুগত বসু তাঁর ‘ভারতমাতা’ বইতে। গভীর গবেষণার ফসল তাঁর এই পরস্পর-সম্পৃক্ত প্রবন্ধ ও বক্তৃতামালায় তিনি জোরালাে যুক্তি সহকারে ভারতের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা আর কর্মকাণ্ডে নেশন, যুক্তিশীলতা আর ধর্মের সম্পর্কটি অনুধাবন করেছেন। নেশনকে মাতৃরূপে কল্পনা করে নেওয়ার বিবিধ ধারার সুক্ষ্ম ব্যাখ্যান পেশ করে তিনি এ বইতে স্বাধীন ও নমনীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ইউনিয়ন হিসেবে ভারতের বিভিন্ন ভাবরূপের উপর আলাে ফেলেছেন, আজকের পরিপ্রেক্ষিতে যা নতুন এক প্রাসঙ্গিকতা অর্জন করেছে। ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ আর ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে বৈপরীত্যর ভুল ছক থেকে বেরিয়ে এসে লেখক রবীন্দ্রনাথ আর গাঁধী, নেহরু আর সুভাষচন্দ্র, অরবিন্দ আর জিন্না এবং উপনিবেশবাদ-বিরােধী আন্দোলনের আরাে অনেক চিন্তাবিদ ও নেতার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বিষয়ে গভীরদর্শী বিশ্লেষণ উপস্থিত করেছেন। বিশ্বজনীনতা আর দেশপ্রেমের মধ্যে কেন দ্বন্দ্ব থাকতেই হবে, সেই পূর্বানুমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যাগুরুবাদী আর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মহল উভয়েই যেভাবে সর্বসমতা আর ঐক্যকে গুলিয়ে ফেলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তােলা হয়েছে। প্রবন্ধগুলিতে। সংসদে প্রদত্ত বক্তৃতাগুলিতে ইতিহাসের সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ভাণ্ডার থেকে উপাদান তুলে এনে রাজনৈতিক নৈতিকতা সম্বন্ধে মূল্যবান শিক্ষা উপস্থিত করা হয়েছে। অসহিষ্ণু ধর্মীয় সংখ্যাগুরুবাদ কেন বিপজ্জনক তা নিয়ে যুক্তি তুলে ধরে এ বইতে বহুস্তরিক ও অনেকের অংশীদারিত্বে সমৃদ্ধ এক সার্বভৌমত্বর সপক্ষে সওয়াল করা হয়েছে। ওই সার্বভৌমত্ব থাকলে তবেই হয়তাে সর্বময় এক ভারতীয় মহাজাতিচেতনা দেশের বিভিন্ন জনসমষ্টির বৈচিত্র্যময় আত্মপরিচয়ের সঙ্গে সহাবস্থান করতে সমর্থ হবে। স্বাধীনতার সত্তরতম জয়ন্তীতে নতুন এক ভারতের বিকল্প ভবিষ্যৎকে আবাহন করবার জন্য ‘ভারতমাতা’ ইতিহাসের গভীরে প্রবেশ। করেছে, যে-ভারতের ভিত্তি হবে দেশের বিভিন্ন জনসমষ্টির সাংস্কৃতিক সান্নিধ্য।