পাখীর বাসায় ছানা খুঁজে, কাদা মাঠে ফুটবল খেলে, মেলা থেকে বাঁশি কিনে বাঁজাতে বাঁজাতে কাটানো পিতার শৈশব, বদলে গেছে এখন তার পুত্রদের কাছে। ওরা এখন এংরি বার্ড আর ফুটবল খেলে ডিজিটালি। অন্ধকারে ভূতের ভয়, জুজুবুড়ির ভয়কে জয় করতে করতে অন্যের বাড়িতে লুকিয়ে চুরিয়ে টিভি দেখে কেটেছে যে পিতার শৈশব; তারই পুত্ররা ভুত, ফুত, জুজু ওসবকে পাত্তা দেয় না মোটেই! এলিয়েনের কার্টুন দেখে তারা যার যার টিভিতে, নিজ নিজ পছন্দের/ চ্যানেলে বা ইউটিউবে। কম্পিউটার বা ছোঁয়াযন্ত্রে ভয়ংকর সব জম্বি মারে ওরা খেলতে খেলতে, অক্লেশে। সদ্যস্বাধীন আর দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশে যে বাবার শৈশব, মৌ মৌ করতো একটি নতুন জামার গন্ধে, কিম্বা রান্নাঘরে মায়ের রান্না করা বিশেষ কোন খাবারের সুগন্ধে, তারই পুত্ররা ওসব নিয়ে ঘামায় না মাথা, মোটেই। বিদেশ থেকে আমাদানি করা সেকেন্ডহ্যান্ড কাপড় পরে বড় হওয়া পিতার পুত্ররা, হালফ্যাশনের নতুন জামাকাপড় বিদেশীদের আগে পরলেও, ও নিয়ে কোন নেই তাদের কোন উচ্ছ্বাস বা উদ্দীপনা। মায়ের রান্নাঘরের চেয়ে প্রিয় তাদের, নানান ফাস্ট ফুডের দোকান আর রেস্টুরেন্ট! হ্যাঁ আমাদের জীবনের গল্প গুলো এভাবেই বদলে গেছে, যাচ্ছে জীবনের সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে। অতএব জন্ম যদি হয়ে থাকে আপনার আশি বা নব্বই দশকে কিম্বা যদি হন আপনি মিলিনিয়াম প্রজন্মের কেউ তবে এই গল্প গুলো ঘটেছে আপনারই পরিবারে, ঘরে; যা হয়তো শুনেছেনও আপনি কখনো কোন অবসরে। আর জন্মে থাকেন যদি, পঞ্চাশ, ষাট বা সত্তর দশকে, তাহলে তো এই গল্পগুলোর নায়ক/ নায়িকা আপনি নিজেই।
Salim Solaiman: আড্ডার মোজাজে গল্প বলে যান, সেলিম সোলায়মান; ঝর ঝরে গদ্যে। গল্প করতে করতে কখনো হাল্কা চালে, কখনো তুমুল কৌতুকে আবার কখনোবা তীব্র শ্লেষে উচ্চারণ করেন সমাজ সংসারের বিদ্যমান অসংগতিসমূহের আর ঐসব সত্যসমূহের, যেসব নিয়ে সচরাচর অধিকাংশই মুখ খুলতে নারাজ। উপন্যাস, ভ্রমনপোন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া বা কবিতা যা’ই লিখেন না কেন তিনি, তাতেই ফুটে তাঁর সেই ধরণটি। চাঁদপুর জেলার সাপদি গ্রামের বহরদার বাড়ীতে জন্ম নিলেও, শৈশব কৈশোর কেটেছে তার কুমিল্লায়। পড়াশোনার শুরু যেমন তাঁর কুমিল্লার দৈয়ারা ফ্রি প্রাইমারী স্কুলে, তেমনি পড়েছেন তিনি বোস্টনের Babson College আর Harvard Business School এ ও। মাঝে জাংগালিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জুনিয়র হাইস্কুল, ঈশ্বর পাঠশালা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রামবিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট ম্যানেজম্যান্টে কাটিয়েছেন শিক্ষাসনদজীবন। প্রানিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করেই হয়ে যান বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানির মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে। অত:পর বাংলাদেশ, সিংগাপুর, সৌদী আরব, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে ঐ কোম্পানির নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পর, আরোহন করেন কোম্পানিটির শীর্ষতম পদে। বর্তমানে তিনি অন্য আরেকটি বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষপদে আছেন। জীবনঘনিষ্ঠ তাঁর লেখালেখিতে স্পষ্ট, নানা বিষয়ে তাঁর তুমুল কৌতুহল, আর পঞ্চাশের মতো দেশভ্রমনের অভিজ্ঞতালব্ধমানবিক জীবনবোধ। মুক্তিযুদ্ধের সত্যকাহিনী নির্ভর তাঁর প্রথম উপন্যাস ,“প্রজাপতি, পলায়ন ও রক্ত” তুমুল সাড়া ফেলেপাঠক সমাজে, আর দৃষ্টি আকর্ষন করে সুধী সমালোচকদের, ফলে সম্মানিত হন তিনি চট্টগ্রাম একাডেমির বিশেষ সম্মাননায়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রকাশিত ও চট্টগ্রামের পাঠকনন্দিত পত্রিকা দৈনিক আজাদীতে নিয়মিত উপসম্পাদকীয় লিখছেন “দেশ হতে দেশান্তরে” শিরোনামে।