কবিতা লেখার সঙ্গে পাঠক আকর্ষণের কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা। আমি সেই চাপ নিতেও চাইনি কখনো। যখন লিখি তখন একটা অদ্ভুত মাদকতা খেলা করে বুকের মধ্যে, ম্যাজিকের মতো এক একটা শব্দ আসতে থাকে, উন্মাদের মতো লিখে যাই আমি, দিগন্ত বিস্তৃত। হংস বলাকার মতো ডানা মেলে উড়তে চেয়েছি কবিতায়, পিছনে ফেলে যাবতীয় সুখ-দুঃখ । কবিতার অনলে নিজেকে দগ্ধ করেছি বারবার, ভেঙে-চুরে নিজেকে করতে চেয়েছি পরিশুদ্ধ। তাইতো কবিতায় নিরুদ্দেশে হারিয়ে যাওয়া, খুব ভোরবেলায়। কবিতার ডুবসাঁতারে কেবলই খুজে বেড়িয়েছি অসীমকে। সীমা আছে এই কথা যেমন নিশ্চিত, অসীম আছে একথাও তেমনি সত্য। তবে কি সীমাকে অতিক্রম করলেই আমরা অসীমকে পাই অথবা মরলেই কি অমর জীবন। জীবনের সব চাওয়ায় পূর্ণতা পেতে নেই অথবা কখনো কখনো মনে হয় পাওয়ার জন্যে যে অস্থিরতা তারও বেশী উন্মাদনা থাকে নিজেকে বঞ্চিত করাতে। অবহেলাও ভালো লাগে কখনো কখনো। এই বইয়ের কবিতাগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে লিখে ফেলেছিলাম। ভিতরে ভিতরে একটা ভীষণ তাড়া ছিলো, কি সেই অস্থিরতা জানতে পারিনি আজও। অস্থির সময়ে আমিই কেবল সময়¯্রােতের বাইরে একটি জায়গায় স্থির হয়ে পরে আছি আর সমস্ত জগৎ আমার অজ্ঞাতে একটু একটু করে নিজেকে বদলে নিয়েছে। সময় বদলে যাক, তুমি ভালো থাকো, আমি ভালো আছি, কবিতার মতো, কবিতার ছায়ায়-ছায়ায়........শত কাশফুল হয়ে ফুটে থাকো।
মিলটন সফি। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন কবি ও কথা সাহিত্যিক। মূলত কবি হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসলেও সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। জন্ম ১১ই আগষ্ট ১৯৮১ [২৭ শ্রাবণ ১৩৮৮] ফরিদপুর, বাংলাদেশ। বিজনেস এডমিনিষ্ট্রেশনে মাষ্টার্স। স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কর্মজীবনের শুরু তারপর নানা অভিজ্ঞতা। বর্তমানে একটি বেসরকারী ব্যাংকে ব্র্যান্ড এন্ড কমিউনিকেশন্স ডিভিশনের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন আধুনিক কবি, মন ও মননে। শ্রেণীসংগ্রাম, প্রকৃতি-জীবন, প্রেম ও নারী তার কবিতার মূল বিষয় হিসেবে বার বার উঠে এসেছে। কাউকে মোহিত করার জন্যে কবিতা লেখেননা তিনি। আবার কখনো কখনো তার মনে হয় তিনি কবিতা লেখেন না বরং কবিতাই তাকে লিখে বেশী। নামে বেনামে লিখেছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রায় সমস্ত পত্রিকায়। জাতীয় দৈনিকগুলো তাকে নিয়ে ফিচার করেছে বহুবার। কবিতায় পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা। ২০১৮ সালে ‘‘পার্সন অব দ্য ইয়ার” এ্যওয়ার্ড অর্জন করেন তিনি। কথা বলতে ভালোবাসেন তার চেয়ে ভালোবাসেন শুনতে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘‘কালোপুরুষ” প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। পরের বছরই দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘‘একটি স্বপ্নস্নাত নারীর জন্যে প্রার্থনা”। অতঃপর হঠাৎ করেই নির্বাসন। যখন শব্দে-ছন্দে, চিত্র-কল্পে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলো। প্রায় এক যুগ তার কোনো লেখা ছাপাখানার বাইরে আসেনি। হঠাৎ করেই গান রচনায় মনোনিবেশ করেন। তাও প্রায় অনিয়মিত। লিখছেন বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়েও। আবৃত্তি করেন। করেন গ্রন্থনা ও নির্দেশনার কাজও। কবিতায়, প্রকৃতি ও প্রেমে ছাপিয়ে গেছেন যেন সমস্তখানিতে, যেখানে শেষ পঙতিতেও তিনি কবি।