মায়ের কাছে ফেরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ইশতিয়াক আলম রচিত একটি সুলিখিত কিশাের উপন্যাস। এর ভাষা ঝরঝরে কাহিনি সংহত, চরিত্রচিত্রণ দক্ষ। একটা বিশেষ সময় ও পরিপার্শ্বের আবেদনময় অথচ বিশ্বস্ত ও বাস্তবভিত্তিক উপস্থাপন উপন্যাসটিকে উল্লেখযােগ্য করে তুলেছে। পাকশী সাঁড়ার পুল তথা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, ঈশ্বরদী রেলের কর্মচারীদের কোয়ার্টার্স, কুষ্টিয়া, কুমারখালী, ভেড়ামাড়া-উল্লাপাড়া প্রভৃতিজুড়ে যে অঞ্চল, তা পাঠক চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর একপর্যায়ে স্থানিক পটভূমি বিস্তৃত হয়ে সীমান্তের ওপারে চলে যায় । উপন্যাসের কিশাের নায়ক ক্লাস নাইনে পড়া ইমু মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেয়, ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়, সেখান থেকে নির্ধারিত দলের সঙ্গে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া পাকা সড়কের কাছে। খুলনা-গােয়ালপাড়া পাওয়ার হাউসের একটা টাওয়ার বিস্ফোরকদ্রব্যের সাহায্যে উড়িয়ে দেয়। উপন্যাসের এইসব অংশ প্রত্যাশিত উকণ্ঠা-উত্তেজনা প্রশংসনীয়ভাবে সঞ্চারিত করেছেন লেখক। ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার উদগ্র আকাক্ষা মুক্তিপাগল দামাল বাঙালি। তরুণরা যে কঠোর প্রশিক্ষণ নেয়, যেভাবে বিভিন্ন অস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করে এবং এর ব্যবহারে পারঙ্গম হয়ে ওঠে আর চিত্রাঙ্কনে লেখক বিশেষ নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। উপন্যাসের সমাপ্তি শিল্পগুণসমৃদ্ধ। এই জাতীয় বই ছােট-বড় সবার চিত্তেই দেশপ্রেম জাগিয়ে তােলে এবং ইতিহাসের গৌরবােজ্জ্বল দিনগুলাের স্মৃতি নতুন করে মনে করিয়ে দেয় । ইশতিয়াক আলমকে মায়ের কাছে ফেরা নামের সুখপাঠ্য কিশাের উপন্যাসটি আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। -ড, কবীর চৌধুরী