বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে ষোল শতকের শেষ এবং সতের শতকের প্রথমার্ধ একটি অত্যন্ত ঘটনাবহুল সময়। ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবরের সেনাপতি মুনিম খানের নেতৃত্বে পরিচালিত এক অভিযানের মধ্য দিয়ে সুবা বাংলায় মোগল আধিপত্যের সূচনা হয় এবং ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাজমহলের যুদ্ধের মাধ্যমে তা স্থায়িত্ব লাভ করে। কিন্তু মোগলদের এই আধিপত্য ছিল মূলত সুলতানি বাংলার পশ্চিম ও পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশকে ঘিরে। বাংলার পূর্বাঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মোগলদের তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়। এই প্রতিরোধ যারা গড়ে তুলেছিলেন ইতিহাসে সাধারণভাবে তাঁদের বারোভুঁইয়া নামে চিহ্নিত করা হয়। মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস পঠন-পাঠন, গবেষণা, আলোচনা ও পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে রয়েছে বারোভুঁইয়াদের সময়কাল। তবে উপযুক্ত তথ্যসূত্রের অভাবে বাংলার ইতিহাসে বারোভুঁইয়াদের অধ্যায়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়নি। বর্তমান গ্রন্থে বারোভুঁইয়াদের অধ্যায়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে মোগল আধিপত্য বিস্তারে শুধু সংঘাতের প্রসঙ্গই আলোতে আসেনি, পাশাপাশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বারোভুঁইয়াদের প্রকৃত সংখ্যা উদ্ঘাটনে। এখানে বারোভুঁইয়ারা আসলে কতোজন ছিলেন সে সংখ্যাটি অস্পষ্ট। আর এই ‘বারোভুঁইয়া’ প্রত্যয়টির মধ্যস্থিত ‘বারো’ আসলেই কি সংখ্যা বিচারে নাকি অন্য কোনো অভিধার ইঙ্গিত করে তাও এই গ্রন্থে বিষয়বস্তু হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। এ ছাড়া বারোভুঁইয়াদের অবস্থান সমগ্র পূর্ব বাংলায় না ভাটির নির্দিষ্ট অঞ্চলে ছিল এবং বারোভুঁইয়াদের পরিচিতি নিয়েও নতুন করে বিশ্লেষণ করার প্রয়াস রয়েছে এই গ্রন্থে। বারোভুঁইয়াদের নেতা ঈসা খান ও মুসা খানের রাজধানী ছিল কতরাভু। তাঁদের রাজধানী কখনও সোনারগাঁও ছিল কি না সেই বিশ্লেষণটিও বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। এ ছাড়া ভূষণা দুর্গের অবস্থান এবং চাঁদ রায় ও কেদার রায়ের সম্পর্ক নিয়েও নতুন করে বিশ্লেষণের প্রয়াস রয়েছে এই গ্রন্থে।