সাহিত্য-সমালোচক হিসেবে বাংলাদেশে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত মাহবুব সাদিক। তিনি সৃষ্টিশীল কবি বলেই অন্য কবির চেতনালোক ও শিল্পরূপ তাঁর মনন-চেতনায় সহজেই প্রমূর্ত হয়ে ওঠে। তাঁর পরিকল্পনাপ্রতিভার তীক্ষ্ণ আলো যে কোনো কবির গভীর ইন্দ্রিয়-সংবেদনা, চেতনা ও আবেগের বিমূর্ত প্রদেশ আলোকিত করে তোলে। একই সঙ্গে তিনি মেধা-মননের সহযোগ-সমন্বয়ে কবিতার বিশ্লেষণকে নান্দনিকরূপে উপস্থাপন করেন। একালের মানুষ শুধু সমকালীন জীবন অভিজ্ঞান বহন করে নাÑস্মৃতিসত্তায় বহন করে মানব সভ্যতার ইতিহাস-অভিজ্ঞান। মিথ তার সেই অভিজ্ঞানের অংশ। এ জন্যেই আধুনিক সাহিত্যে মিথ ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। মধুসূদন থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় পাশ্চাত্য ও ভারতীয় পুরাণ নানামাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছে। ত্রিশোত্তর কবিতায় মিথ প্রয়োগ হয়েছে আরো নিপুন পারদর্শিতায়। মিথ এখানে কখনো রূপক বা প্রতিরূপক আকারে, কখনো-বা গূঢ় প্রতীকরূপে ব্যবহৃত হয়েছে কবিতায়। বর্তমান গ্রন্থে মাহবুব সাদিক ত্রিশোত্তর আধুনিক কবিতায় ব্যবহৃত মিথের নান্দনিক বিশ্লেষণ করেছেন। ত্রিশের কবিদের পুরাণ-অভিজ্ঞান ও শিল্পবোধ কবিতায় যে রহস্যমধুর আলো জ্বেলেছে মাহবুব সাদিক সমালোচকরূপে নির্মাণ করেছেন তারই এক মননশীল রূপরেখা।
মাহবুব সাদিক (২৫শে অক্টোবর ১৯৪৭), জন্ম টাঙ্গাইলের আইসড়ায়। সা’দত কলেজে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করেছেন। পিএইচ.ডি. করেছেন বুদ্ধদেব বসুর কবিতার বিষয়ে। প্রথম জীবনে যুক্ত ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে। শোষিত মানুষের জন্য লড়েছেন। একাত্তরে করেছেন মুক্তিযুদ্ধ। ষাট দশকের গোড়া থেকেই কবি হিসেবে খ্যাতি; কবিতা ছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, ছড়া, কিশোর কবিতা ও উপন্যাস এবং প্রবন্ধ। মাহবুব সাদিকের প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা পঁয়ত্রিশেরও বেশি। একালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবিরূপে চিহ্নিত মাহবুব সাদিক বাংলা একাডেমী পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত।