বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও গণিতকে জনপ্রিয় করার সঙ্গে মুনির হাসানের নাম ওতপ্রােতভাবে জড়িত। স্কুলের শিক্ষার্থীদের গণিত, বিজ্ঞান, প্রােগ্রামিং ও রােবটিক্সে দক্ষ করে তােলার জন্য প্রায় আড়াই দশক ধরে কাজ করে চলেছেন এই বিজ্ঞানকর্মী। সঙ্গে লেখালেখি। প্রচুর লেখেন। তবে, বেশিরভাগই দৈনিক প্রথম আলাে’তে নিবন্ধ বা প্রবন্ধ কিংবা নিজের ব্লগ বা ফেসবুকে কদাচিৎ লিখেছেন কল্পবিজ্ঞান। কয়েকটি কল্পবিজ্ঞানের গল্প প্রকাশিত হয়েছে। তবে এবারই প্রথম বড়াে আকারে কোন কল্পবিজ্ঞান লিখেছেন। এই বিজ্ঞান-লেখক। ময়ালের গল্প আবর্তিত হয়েছে কয়েকটি রহস্যময় ঘটনাকে কেন্দ্র করে। বিশ্বের বিভিন্ন শহর থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন বিজ্ঞানীর একই সময় হারিয়ে যাওয়া, ঢাকায়, কক্সবাজার কিংবা দক্ষিণ তালপট্টির কাছে কিছু একটার আবির্ভাব ইত্যাদির মধ্যে কী কোন সম্পর্ক আছে? সন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিক জাহিরা জানতে পারে একদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাতিয়ে বেড়ানাে দুই যমজ বােনের কথা। ঢাবি’তে তাদের ডাকা হতাে এন-স্কোয়ার নামে। উজ্জ্বল এবং ব্যতিক্রমী এই দুই জেনেটিক বিজ্ঞানীর সঙ্গে কী কোন সম্পর্ক আছে দেশের নানা অঞ্চলে হয়ে যাওয়া বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনার? একটু ভিন্ন ধারার কল্প বিজ্ঞানের এই আখ্যান আপনি পড়বেন এক নিঃশ্বাসে এটুকু নিশ্চিন্তে বলা যায়।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সফলতার গল্পের সাথে যে ব্যক্তির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি মুনির হাসান। তিনি একইসাথে একজন বিজ্ঞানী, লেখক, ব্লগার ও উদ্যোক্তা, যিনি তারুণ্য ও উদ্যোক্তা এই দুইয়ের মেলবন্ধনে বেকারত্বের বাঁধা ডিঙোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহ জাগানিয়া প্লাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দেবো’ এর সাড়া জাগানো পথচলা ও সাফল্যের পেছনেও রয়েছে এই মানুষটিরই হাত। মুনির হাসানের আরেকটি পরিচয় হলো- তিনি বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (BdOSN) এর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে মুনির হাসান দৈনিক প্রথম আলোর যুব কর্মসূচী সমন্বয়কের কাজে নিয়োজিত আছেন। মুনির হাসানের জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৯ জুলাই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানেই সেন্ট মেরিজ, মুসলিম হাই স্কুল ও মুসলিম এডুকেশন সোসাইটিতে শেষ করেন হাই স্কুলের পাঠ। বাকি শিক্ষাজীবন জুড়ে আছে চট্টগ্রাম কলেজ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অবদান ও সম্পৃক্ততার জন্য বন্ধু মহলে ‘ম্যাথ মুনির’ নামে পরিচিত হলেও বুয়েটে তাঁর পড়ার বিষয় ছিলো ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। দৈনিক সংবাদের সাপ্তাহিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফিচার পাতায় লেখালেখি করতে গিয়ে সাহচর্য পেয়েছেন আ. মু. জহুরুল হক, আবদুল্লাহ আল-মুতী, শরফুদ্দিন কিংবা এ আর খানের মতো বিজ্ঞান লেখক ও বিজ্ঞান কর্মীদের। তাঁদের অনুপ্রেরণায়ই বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে আরও উদ্যমী হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোর বিজ্ঞান বিষয়ক ফিচার পাতারও করেছেন সম্পাদনা। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০০৩ সালে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের সাহচর্যে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। বর্তমানে সেই সফল কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন মুনির হাসান। তাঁর অসাধারণ সব কাজের সাথে তাল মিলিয়ে, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সময়ে সময়ে বেশ কিছু বইও লিখেছেন মুনির হাসান। মুনির হাসান এর বই সমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শরবতে বাজিমাত, গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং, গল্পে গল্পে ধাঁধা, অঙ্কের ধাঁধা ধাঁধায় অঙ্ক ইত্যাদি। মুনির হাসান এর বই সমূহ এর মধ্যে লেখকের বুয়েটে জীবন নিয়ে লেখা আত্মজৈবনিক বই ‘পড়ো পড়ো পড়ো’ পেয়েছে অসম্ভব পাঠকপ্রিয়তা। তাঁর জীবনেরই মতো মুনির হাসানের বই তাঁর পাঠকদের উদ্দীপিত করে নিজের পছন্দে নিজের জীবন বেছে নিতে ও গড়ে তুলতে।