ঘুম ভেঙে সিয়ান দেখে অচেনা এক সাদা-নীল ঘরে শুয়ে আছে-হাসপাতাল হবে হয়ত। স্প্রিং-এর প্রান্তে চাকা লাগানো পায়ে গড়িয়ে দুজন নার্স আসে, কৃত্রিম মানুষ তারা-নিকি আর জিনিথ। সিয়ান জেগে ওঠে সেই সময়ে যখন মানবিক কাজের জন্য আর মানুষের ওপরে নির্ভর করা যায় না। যখন বিচিত্র ভাষার জায়গা নিয়েছে গ্লোবাল ভাষা আর বন্ধুত্ব-ভালোবাসা হয়ে গেছে এক বিস্মৃত অভ্যাস। অথচ সিয়ানের স্মৃতিতে তখন জ্বলজ্বলে অন্য এক মানুষের অস্তিত্ব, যার নাম নাবিল। তার আছে অন্য এক পৃথিবী, যা শত শত বছর আগের। আজকের গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় ভুলে সে তাই বাস করে আবেগী অতীতে। অসম্ভব জেনেও ফিরে যেতে চায় সেখানেই, যেখানে মানুষ ফিরে যেতে পারে না। আপন করে পেতে চায় প্রিয় মানুষদের যারা কে জানে কোন কালে কোথায় মিশে গেছে। শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সিয়ান দমে না। যন্ত্রের সহায়তায় যন্ত্রকেই ফাঁকি দিতে চায়। নিজের ভিতরে জিইয়ে রাখা নাবিলের স্মৃতিময় রাস্তায় হাঁটে, তার মা আর বন্ধু তৃণাকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু তাই বলে কি শত শত বছর পিছনে যাওয়া যায়! অথচ অদম্য সিয়ান ঠিকই পৌঁছে যায় সেখানে। তারপর কোনো এক অচেনা মানুষের চোখের ভিতর দিয়ে বন্ধু তৃণাকে খুঁজতে থাকে-কিন্তু খুঁজে পায় কি?
আফসানা বেগম জন্ম ২৯ অক্টোবর ১৯৭২ সালে ঢাকায় । বাবার চাকরির সুবাদে শৈশব-কৈশাের কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়, বিশেষত দিনাজপুরে । দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকার হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায়। প্রশাসনে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ।। পরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখানেই পিএইচডি গবেষণা করছেন। উল্লেখযােগ্য বই : প্রতিচ্ছায়া, বেদনার আমরা সন্তান, আমি অথবা আমার ছায়া, দিনগত কপটতা। অনুবাদ করেছেন নাদিন গড়িমার, উইলিয়াম ফকনার, হুলিও কোর্তাসার, অ্যালিস মানরাে, আইজাক আসিমভ, ফিদেল কাস্ত্রোসহ অন্যান্য লেখকের কালজয়ী রচনা। ২০১৪ সালে পেয়েছেন জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার ।