১২০৩ খ্রিস্টাব্দ- সে বছর বর্ষার শুরুতেই মহারাজ লক্ষণসেন যখন দক্ষিণের সুন্দরবন অঞ্চলের বিদ্রোহী পাল-নৃপতি ডুম্মনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন বলে সুবিশাল নৌ- পদাতিক এবং হস্তীবাহিনী নিয়ে সমর সজ্জার উদ্যোগ করছেন, বখতিয়ার ততদিনের তাম্রকূট-অমরকূট জয় করে শোন-নদী পাড় হয়ে দুর্গম ঝাড়খন্ডের অরণ্য ভাগের উপর দিয়ে ঝড়ের বেগে অশ্ব হাঁকিয়ে বঙ্গ দেশের অভিমুখে ছুটে আসছেন। অন্যদিকে, আত্রাই তীরের পরিত্যক্ত রাজপুত্র নরুনের ভাবনায় উঠে আসছে পুরনো পিতাদের টগবগে অহম। যুদ্ধ দিনের দুন্দুভি- “আমি কখনো ঘুমাই না। আমার ঘুম আসে না। দিবারাত্রি অষ্টপ্রহর ঘুমে কিংবা জাগরণে নিজেকে খুব ধীরে, খুব গোপনে তৈরি করছি আমি- যারা আমার রাজ্যপাট এবং আমার ঈশ্বর এবং প্রেমিকাদের চুরি করে নিয়ে গেছে- আমি তাদের বুকের পাঁজায় শানিত তরবারি ঠেসে দিয়ে স্বর্গীয় অপ্সরাদের চুম্বনের আনন্দ পাই- যেদিন আমার সত্যিকারের রূপ দেখবে- আমার মৃগচর্ম পরিহিত পাদুকাযুগলে চুম্বনের নেশায় লালায়িত হবে যাবতীয় কামাহত প্রেয়সীরা- আমি সেই প্রখর পুরুষ-“
প্রেম অথবা যৌনতা... নির্বাণ অথবা নৃশংসতা... জয় অথবা মৃত্যুর নদী পেরিয়ে কে হবেন যুদ্ধদিনের অগ্নিপুরুষ? বাংলার ইতিহাসের সেই অবিস্ময়রণীয় অধ্যায় নিয়ে রচিত প্রেম ও যুদ্ধ দিনের গল্পে আপনাকে স্বাগতম হে বন্ধু- হে প্রিয়-
জন্ম: ১৫ই পৌষ মধ্যরাত্রি; পৃথিবীর যেকোনো নামিদামী শহর হতে অন্তত কয়েকশ মাইল দূরে, অতলান্ত এক হাওর-জনপদের আদিম ও অকৃত্তিম কৃষক পরিবারে। ঢাকায় আগমণ: ২০০৬ সালে। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ হতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এখন এমফিল গবেষণা ও শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগে Bangladesh Studies: History & Culture শাস্ত্রের লেকচারার। ২০১৩ সালে বেশ কয়েকটি সাহিত্য সাময়িকী এবং জাতীয় দৈনিকে গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাহিত্য জগতে পদার্পণ। শিক্ষানবিশ চলচ্চিত্রকার এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন ঘাসফড়িং, জাজ মাল্টিমিডিয়া সহ আরও কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে। প্রথম উপন্যাস, “ঝড় ও জনৈক চিন্তাবিদ" প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। প্রথম উপন্যাসের মাধ্যমেই লেখক এদেশের বিদগ্ধ ও বলিষ্ঠ পাঠক মহলের দৃষ্টি ফেরাতে সক্ষম হন। সাহিত্যে শক্তিমান এক কথাশিল্পীর অবশ্যম্ভাবী আগমনী-বার্তা ঘোষিত হয়। ঐতিহাসিক পটভূমিতে লেখা তাঁর দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস "অগ্নিপুরাণ" পাঠকের ভালোবাসায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ সালের অন্যতম বেস্টসেলার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। অগ্নিপুরাণ-এর ভারতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় কলকাতার খোয়াবনামা থেকে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বইটি বিপুল আগ্রহ ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠে। প্রেম ও যুদ্ধদিনের গল্পকার মুহম্মদ নিজাম পুরনো এবং দুষ্প্রাপ্য বই, পুঁথি, গান, কেচ্ছা ও কিংবদন্তী সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন। অবসরে ভালোবাসেন প্রিয়তম মানুষদের সঙ্গে আড্ডা, বই এবং বৃক্ষের সান্নিধ্য।