ভূমিকা ১৭৫৭ সালের পলাশি যুদ্ধের পর আমাদের পরাধীনতার দীর্ঘ রজনী শুরু হলো, তেমনি সেই তমসঘন রাতের আঁধার ভাঙতে উপমহাদেশের মুসলমান সমাজ অসংখ্য সংগ্রামে অগণিত জীবন দান করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশবিশেষ বিশেষত অত্যাচারী নীলকরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের মরণপণ সংগ্রাম আজও একটি অলিখিত অধ্যায় হয়ে আছে। সমগ্র বাংলায় নলি বিদ্রোহের শতকরা ৯০ ভাগ অবদান মুসলমান বীর কৃষকদের। অথচ তৎকালীন পত্র-পত্রিকা ও লেখকেরা মুসলমান বীরদের বীরত্ব চেপে রেখে নীল সংগ্রামের ভূয়ো ইতিবৃত্ত রচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালেও কয়েকজন লেখক ঐ একদেশদর্শী লেখকদের রচনাসমূহ আশ্রয় করে নীলবিদ্রোহ সম্বন্ধে আপেক্ষিক আলোচনা করেছেন। দুঃখের বিষয়, ঐ রচনাগুলোয় ক্ষেত্রানুসন্ধানের অভাবে প্রকৃত নীল বিদ্রোহীদের বিশেষ অবদান লেখকরা উল্লেখ করেন নি। যাতে করে সত্যবিবর্জিত বড়ো বড়ো গ্রন্থ রচিত হয়েছে বটে কিন্তু প্রকৃত বীরকৃষক সমাজ যে অমিমশৌর্য ও বীর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন সে বিষয়ে কেউ কোনো গ্রন্থই রচনা করেন নি। অথচ নীলকরদের বিতাড়নের জন্য নীল বিদ্রোহীর কত মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে আর কত যে পরিবার ধ্বংস হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। পক্ষান্তরে, তৎকালীন বুদ্ধিজীবীমহল নীলচাষে নীলকরদের উৎসাহিত করেছেন। এমন কি ইংরেজ সরকারের নিকট নীলচাষ তথা কৃষক নিপীড়ন অব্যাহত রাখঅর অনুরোধও করেছিলেন তারা। উল্লেখিত ঐতিহাসিক সত্যকে সামনে রেখে বর্তমান গ্রন্থ ‘নীল বিদ্রোহের অজানা ইতিহাস’ পূর্বে প্রকাশিত নীলবিদ্রোহ ও কৃষকবিদ্রোহ সম্বন্ধে লেখকদের রচনাসমূহ, প্রাচীন আমলের দলিল-দস্তবেজ, অসংখ্য নীল বিদ্রোহের স্থান ও কুঠিসমূহ পরিদর্শন, স্থানীয় লোকদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে রচনা করা হয়েছে।
এই গ্রন্থটি রচনা করা হয়েছে প্রায় ১৪ বছর আগে। কিছু অংশ পরে যোগ করা হয়েছে। যা হোক, সে সময়ে তা প্রকাশ পায় নি। ‘ঠিকানা’ গ্রন্থটি প্রকাশ করে আমাকে বাধিত করেছে।
মহসিন হোসাইন ২১ বৈশাখ, ১৪০৬ ঢাকা।
সূচিপত্র * বাংলাদেশে নীল চাষ * নীলকরদের শোষণ ও উৎপীড়ন * বিদ্রোহে কৃষকদের দুনির্বার অংশগ্রহণ * সংবাদপত্রে ও ইতিহাসে প্রকৃত বিদ্রোহীরা উপেক্ষিত * নীলচাষির বিদ্রোহ ও সংগ্রাম * বাঙালি জমিদার : বাঙালি নীলকর * মুসলিম নীলবিদ্রোহীদের প্রতিকার * নড়াইল জেলার নীলচাষ ও বিদ্রোহ * বিদ্রোহকালীন সমাজ ও সাহিত্য-মুহম্মদ ইউসুফ হোসেন * নীল চাষ ও বাংলার কৃষক-মেসবাহুল হক * যশোরের নীলচাষি ও নীল বিদ্রোহ- হোসেনউদ্দীন হোসেন * যশোর অঞ্চলের প্রজা বিদ্রোহ- সুপ্রকাশ রায় * নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ- সতীশচন্দ্র মিত্র
মহসিন হােসাইন মূলত সত্তর দশকের ব্যতিক্রমী কবি। তিনি কখনাে কখনাে আমাদের চেনা পৃথিবীর অজ্ঞাত স্থান ও কালের ইতিবৃত্তবেত্তা তিনি সংগ্রহ করেন। আঞ্চলিক ইতিহাস, রচনা করেন ইতিহাসগ্রন্থ। মহসিন হােসাইন বিচিত্রগামী সাহিত্যসাধক। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ৫৮। তিনি যশাের জেলার (বর্তমান নড়াইল জেলা) ঐতিহ্যবাহী কালিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক কলাবাড়িয়া গ্রামে ১৩৬১ সালের ২১ বৈশাখ বঙ্গলবার পিতৃগৃহে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুর রাজ্জাক মিয়া, মা মােসাম্মৎ শাহেদা খানম। তাঁর রচনাশৈলী যেমন ব্যতিক্রমী তেমনি জীবনাচারেও ভেতরে ও বাইরে তিনি। পথভােলা এক পথিক। জীবনের নানা বাকে পরিক্রমা তার, কোথাও যেন থিতু হতে মানা। তিনি ছিলেন প্রত্যক্ষ মুক্তিযােদ্ধা, কিছুকালের জন্য ছিলেন। মিলের শ্রমিক, কখনাে ছিলেন শিক্ষক (মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ), কখনাে ছিলেন ফরিদপুর মিউজিয়ামের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। পাঠোদ্ধারক, আবার কখনাে ছিলেন। ছাপাখানার ম্যানেজার, লােকসংস্কৃতি সংগ্রাহক, কবিগান, জারিগান, ভাবগান ও যাত্রাগানের রচয়িতা, অভিনেতা, শিল্পী, রেডিওর ব্রডকাস্টার, পাণ্ডুলিপি রচয়িতা ও নাট্যকার। শৌখিন বেহালাবাদক, চলচ্চিত্র অভিনেতা ও টিভি নাট্যাভিনেতা। বর্তমানে তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতায় নিয়ােজিত।