একটা ভাষা কিছুই না বুঝে তিলাওয়াত করছি ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই অযৌক্তিক লাগত। কিন্তু যতবার অর্থসহ পড়তে গেছি, প্রতিবারই একদম শুরুতে গিয়েই আটকে গেছি। সূরা বাক্বারার পুরোটা জুড়ে মুসা আলাইহিস সালামের কাহিনী বলা হচ্ছে, কোথা থেকে শুরু হয়েছে, কীসের পরে কী হলো কিছুই বুঝতাম না। তাই উৎসাহ ধরে রাখতে পারতাম না। তখন যেটা আমি বুঝি নি তা হল কুরআনের বর্ণনা পদ্ধতিটা আসলে কথোপকথনের ভঙ্গীর মতো। এটা কোনো ইতিহাস গ্রন্থ নয়, তাই কাহিনীগুলো ধারাবাহিকভাবে বলা হয় নি। অন্য কোনো উৎস থেকে কাহিনীগুলোর ক্রম না জানলে অনুবাদ পড়তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা প্রবল, যেটা আমার হত। এই বইয়ে তাই আমরা কুরআনে বর্ণিত বনী ইসরাইলের কাহিনী ধারাবাহিকভাবে জানার চেষ্টা করেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি কিভাবে আমরা এক উম্মাহ থেকে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিম- এই তিনটা ভাগে ভাগ হয়ে গেলাম। এই বইটা তাই ‘শিকড়ের সন্ধানে’ লিপ্ত হওয়ার একটা বিনম্র প্রচেষ্টা; আমরা কেন মুসলিম, ইহুদি বা খ্রিস্টানদের সাথে আমাদের বিশ্বাস ও আচারের পার্থক্যটা কোথায়, সেটা আবিষ্কারের একটা যাত্রা। এটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কুরআনের ঘটনাগুলোর একটা নির্মোহ বিশ্লেষণ। নিজের অজান্তেই আমরাও কি ধারণ করে চলেছি সেই একই বৈশিষ্ট্যসমূহ, যার জন্যই আল্লাহ পূর্ববর্তীদের তিরষ্কার করেছেন? আমরা কি তাদের অন্তর্ভুক্ত, কিয়ামতের দিন তাদের যাদের ব্যাপারে অভিযোগ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন- হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায় এই কোরআনকে পরিত্যাগ করেছে। (সূরা ফুরক্বান, আয়াত : ৩০)
হামিদা মুবাশ্বেরা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পিএইচডি করছেন। এর আগে মালয়শিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (IIUM) থেকে ইসলামিক ফিনান্সে মাস্টার্স করেছেন। ব্যাচেলর করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসনে ইনস্টিটিউট (IBA) অনুষদ থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ইসলামিক অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় (IOU) থেকে, সেখানে ইসলামিক স্টাডিজে দ্বিতীয় ব্যাচেলর সম্পন্ন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা সন্তানের জননী। হরেক রকমের বই পড়া ও লেখালেখি হামিদা মুবাশ্বেরার কাছে এক ধরনের নেশার মতো। বাবার আকস্মিক মৃত্যু তাকে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করে। কী হয় মৃত্যুর পর? এটা নিয়ে কোন ধর্ম কী বলে? কেন আমরা মুসলিম? অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে আমাদের পার্থক্য কোথায়? নিজের শিকড়, আত্মপরিচয় অনুসন্ধানের ব্যক্তিগত যে যাত্রা, সেই পথ থেকে কুড়ানো মণি-মুক্তা নিয়ে লিখেছেন ‘শিকড়ের সন্ধানে’।