বৈরী মানুষের চেয়ে অধিক শঙ্কিল বৈরী সময় ও পরিবেশ। ভাঙাগড়ার জীবনে প্রতিনিয়ত আমাদের পার হতে হচ্ছে সেই প্রতিকুল সময়ের স্রোত। আমাদের বিরূপ সময়ের অবিকশিত প্রণয়, বৈরী প্রহরের সংসার, ধূসর স্বপ্নহর জীবনের বর্ণহীন আখ্যান, নিষ্ফল ঊষর অস্তিত্ব এরকম নানান মাত্রার ও স্তরের আলেখ্যের মাধ্যমে এই গল্পগ্রন্থে বিধৃত হয়েছে আমাদের চারপাশের মানুষের কথা। গল্পগুলোতে ডিজিটাল যুগের কেনো পদছাপ নেই, সে অর্থে পুরোনো, কিন্তু ঘটনাগুলো যেন সবসময়ের, সর্বকালের। গ্রন্থভুক্ত এগারটি গল্পের কাহিনী ও পটভূমি ভিন্ন, তবে গন্তব্য যেন একমুখী, মানুষের অতৃপ্তি, অসুখ ও অপূর্ণতার দিকেই যেন আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে যায় বৈরী সময়।
পিছনের কভার: ফারুক একটা কিছু বলে গল্প শুরু করেন। তারপর ঢুকে যান মূল আখ্যানে। আমাদের নিয়ে যান গল্পের আরেক বাস্তবতায়। যেখানে থাকে সমকাল কিংবা সমাজ কিংবা মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য, ভন্ডামি কিংবা থাকে নি¤œবর্গের জীবন। থাকে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ। থাকে আঞ্চলিক ভাষার ঠিকঠাক বা নান্দনিক ব্যবহার। পাওয়া যায় চমৎকার চমৎকার উপমা। হারুন পাশা, পাতাদের সংসার এমন করেই বাংলাদেশের নানা সময় ও ঘটনাকে ধারণ করে আছে গল্পগুলো। ফারুক মঈনউদ্দীনের গল্পপাঠে পাই আমাদের সমাজ, মানুষ ও সময়। শিপু কুমার সরকার, পাতাদের সংসার ফারুক মঈনউদ্দীন গল্পের জাদুকর। সময়কে তিনি ধরতে পেরেছেন নিজস্ব ছাঁচে। প্রত্যেক লেখকই তাঁর কালের প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনিও এর ব্যতিক্রম নন। আধুনিক জটিল জীবনের অমীমাংসিত ধাঁধাঁগুলো উঠে এসেছে তাঁর লেখনীতে। কেবল একটি দুটি দিক নয়, তিনি লিখেছেন সমাজের সার্বিক বিষয়-আশয় নিয়ে। খালিদ হাসান তুষার, পাতাদের সংসার
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করলেও ফারুক মঈনউদ্দীন মূলত গল্পকার। তাঁর ছোটগল্পগুলো ভাষার অনবদ্য কাব্যিকতার জন্য প্রথম থেকেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। মানুষের অন্তর্লীণ অনুভ‚তি ও বহিরাচরণ তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রমূর্ত হয়ে ওঠে। তাঁর প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সাহিত্য সাময়িকীতে, আর প্রথম গল্পগ্রন্থ ১৯৯০ সালে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর অন্যতম গল্পগ্রন্থ আত্মহননের প্ররোচনা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি অনুবাদ, সাহিত্য সমালোচনা, ভ্রমণ এবং অর্থনীতি বিষয়ক লেখালেখিতে নিজেকে ব্যাপৃত করেছেন। মার্কিন লেখক ক্লিনটন বি সিলির কবি জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যিক জীবনী অ্যা পোয়েট অ্যাপার্ট গ্রন্থটির অনুবাদের জন্য তিনি ‘আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০১১’ এবং ভ্রমণগ্রন্থ সুদূরের অদূর দুয়ার-এর জন্য ‘সিটি-আনন্দআলো পুরস্কার ২০১৯’ লাভ করেন। তাঁর এযাবত প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ তিনটি, অনুবাদ চারটি, ভ্রমণ সাতটি, অর্থনীতি-ব্যাংকিং বিষয়ক গ্রন্থ পাঁচটি এবং প্রবন্ধগ্রন্থ একটি।