‘সা’দত হাসান মন্টোর প্রবন্ধ: কাফনের জামা’ বইটর কিছু কথাঃ বিগত তিন দশকের অধিককাল আমি উর্দু কথাসাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক লেখিকাদের গল্প-উপন্যাস ও রচনা অনুবাদ করে আসছি। তন্মধ্যে মান্টোর রচনাই সবচেয়ে বেশি। মান্টো শুধু উর্দু ছোটগল্প লিখে ক্ষান্ত হননি, পত্র-পত্রিকায় কলামও লিখতেন এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে জোরালো ভাষায় সাহসিকতার সাথে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। তাঁর সেই সব নিবন্ধ ও কলামের অনুবাদ সংকলন ‘কাফনের জামা’। সত্তরের দশকে 12টি নিবন্ধ নিয়ে এই সংকলনটি ‘গল্প লেখক অশ্লীলতা’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমান সংকলনে মান্টো সম্পর্কে তাঁর ভাগিনা হামিদ জালালের ‘মান্টো মামার মৃত্যু’ নিবন্ধটি অন্তর্ভুক্ত করেছি। এই নিবন্ধে হামিদ জালাল মদপানে আসক্ত উর্দু সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী মান্টোর করুণ মৃত্যুবরণের বর্ণনা দিয়েছেন নিপুণভাবে। তাছাড়া আমি কেন ছবি দেখি না, অভিজাত মহিলা ও চিত্রজগৎ এই দুটি নিবন্ধ এই সংকলনে সন্নিবেশিত হয়েছে। ‘সা’দত হাসান মান্টো : 50 বছর আগে ও পরে’ নিবন্ধে নতুনভাবে মান্টোর জীবনের খুঁটিনাটি বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছি, যা পাঠকদের মান্টোকে জানার বিশেষ সুযোগ এনে দেবে। 26শে আগষ্ট 2005 তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠের সাময়িকী বিভাগে আমার লেখা “সা’দত হাসান মান্টো: 50 বছর আগে ও পরে” প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশিত হয়। দৈনিক জনকণ্ঠের সহকারী সম্পাদক বিশিষ্ট কবি নাসির আহমেদ এর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণাঃয় এই বিশেষ নিবন্ধটি লিখেছিলাম। লেখাটি পাঠক মহলে সাড়া জাগিয়েছিল। এজন্য আমি তার কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। পোট্রেটে মান্টোর ডাগর ডাগর একজোড়া চোখ এবং রাগী রাগী ভাব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছিল। পোট্রেটটি এঁকেছিলেন জনকণ্ঠের নিজস্ব শিল্পী সাফিন ওমর। “কাফনের জামা” গ্রন্থে সাফিন ওমরের আঁকা পোট্রেটটি ব্যবহৃত হয়েছে। এজন্য শিল্পীর কাছে আমি ঋণী।
জাফর আলমের জন্ম ১৯৪৩ সালে কক্সবাজারে। স্কুল জীবন থেকে তার লেখালেখি ও সাংবাদিকতা শুরু। পঞ্চাশের দশকে তিনি সাপ্তাহিক পল্লীবার্তা পরবর্তীকালে পূর্বদেশ, দৈনিক সংবাদ এবং তৎকালীন পাকিস্তান অবজার্ভার (বর্তমানে বাংলাদেশ অবজার্ভার)-এর বগুড়া জেলা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানে (অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলা) সহ-সম্পাদক হিসেবে এবং পরে জনপদে সিনিয়র সহসম্পাদক হিসেবে যােগদান করেন। পরে তথ্য অধিদফতরে ১৯৮০ সালে তথ্য অফিসার হিসেবে যােগদান করেন। ইতিপূর্বে তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরে কপি রাইটার হিসেবে কাজ করেন। আশির দশকে সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জনসংযােগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। তাছাড়া তিনি তথ্য অধিদফতরের সংবাদ কক্ষে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত ডিউটি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নব্বই-এর দশকে কোলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে কাউন্সিলর (প্রেস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কলামিষ্ট, অনুবাদক ও সমালােচক হিসেবে জাফর আলম সুপরিচিত। ইতােমধ্যে তার ২২টি অনুবাদ গ্রন্থ ও একটি জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকান বায়াে গ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট ১৯৯৯ সালে তাকে রিসার্চ বাের্ড অব এডভাইজার্স-এর সদস্য মনােনীত করেন। অনুবাদের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন প্রমা সাহিত্য পুরস্কার (কলকাতা ১৯৯৭), কক্সবাজার সাহিত্য। একাডেমী পুরস্কার ২০০৪, জাতীয় প্রেসক্লাব লেখক সম্মাননা ২০০৩ এবং বাংলাদেশ জনসংযােগ সমিতির পক্ষ থেকে জনসংযােগ ব্যক্তিত্ব পদক ২০০৬। জনাব জাফর আলম বাংলা একাডেমীর ফেললা/জীবনসদস্য, বিসিএস (তথ্য সাধারণ) সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জীবন সদস্য, বাংলাদেশ জনসংযােগ সমিতির সদস্য। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সহযােগী সদস্য, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির জীবন সদস্য এবং কক্সবাজার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে সহসভাপতি। তিনি ২০০১ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য অধিদফতরে সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার হিসেবে অবসর নিয়েছেন।