১৫৩৭ সালের কথা। এল দোরাদো নামক কিংবদন্তীর সোনার নগরীর খোঁজে এস্পানিয়া থেকে দলে দলে মানুষ তখন আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছে। সে সময়ই এক অতি সাধারণ যুবতী অক‚ল দরিয়া পার করে চলেছে আমেরিকায়। নাম তার ইনেস, ইনেস সুয়ারেজ। তবে তার উদ্দেশ্য ভিন্ন স্বামী, হুয়ান দে মালাগার সন্ধান ও স্বামী-পরিত্যক্তার বন্দি জীবন থেকে পরিত্রাণ। আমেরিকায় পৌঁছে সে জানতে পারে যে তার স্বামী ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে। ফ্রান্সিসকো পিজারোর সৌজন্যে লিমায় বসবাসের অনুমতি লাভ করার পরে তার জীবনে আসে আকস্মিক পরিবর্তন। বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ পেদ্রো দে ভালদিভিয়ার সঙ্গে পরিচয় ও প্রেমের ফলে ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে চিলে অভিযানে সে তার সঙ্গী হয়। বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, সংগঠন দক্ষতা, অসি ও অশ্বচালনায় পারদর্শিতা, চিকিৎসাবিদ্যার জ্ঞান ও মাটির তলায় জলের উৎস খুঁজে বের করার অদ্ভুত ক্ষমতাবলে সে ভালদিভিয়া তথা বাহিনীর কাছে অপরিহার্য হয়ে ওঠে। চিলেতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরে ধীরে ধীরে সে হয়ে ওঠে চিলের ভারপ্রাপ্ত গোবেরনাদোরা। কিন্তু আবার আসে অপ্রত্যাশিত আঘাত। পেদ্রোর সঙ্গে তার দীর্ঘ দশ বছরের প্রেমের সম্পর্ক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়। তার জীবন আবার নূতন বাঁক নেয়। ভালদিভিয়ারই সহচর রোদরিগো দে কিরোগাকে বিবাহ করতে সে বাধ্য হয়। ১৫৫৩ সালে ভালদিভিয়ার মৃত্যু ঘটলেও তার জীবন ভরে ওঠে রোদরিগোর কাছ থেকে পাওয়া সম্মান ও ভালোবাসায়... নারীর মর্যাদা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ইনেস সুয়ারেজ চিলের ইতিহাসে আজও ভাস্বর। এই ইতিহাসাশ্রিত কাহিনি ইনেসের এবং ব্যক্তি ইনেসকে ছাপিয়ে আত্ম-আবিষ্কারের, সামান্যা থেকে অসামান্যা হয়ে ওঠার, ব্যক্তি থেকে প্রতীক হয়ে ওঠার।