‘অন্তর্জাল’ বইটির কথাঃ নগরজীবনের কোলাহল থেকে দূরে মনোরম পাহাড়ি এলাকায় এক অবসর বিনোদন কেন্দ্র। কালক্রমে এ কেন্দ্র হয়ে ওঠে ব্যস্ত ফিল্ম-টিভি সিটি। পর্যটক, প্রোডাকশন হাউস ও স্থানীয় মানুষ মিলে সেখানে গড়ে তোলেন নতুন সমাজ-পরিবেশ। প্রতি বছর সেখানে মাসখানেক কাটান লালচাঁদ। ব্যস্ত জীবনের বাইরে গিয়ে ফেলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। ভাবেন, এ তাঁর অন্য জীবন। কিন্তু লালচাঁদের স্বস্তি-শান্তি তছনছ করে দেয় এক নারী- যাকে তাঁর মনে হয় ‘এক আশ্চর্য রমণী’। ওই নারীর প্রতি আকর্ষণ ক্রমে আচ্ছন্ন করে তোলে তাঁকে। তখন এর কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি দেখেন-সমাজ জীবনের সঙ্গে কিভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির নানা প্রবণতা। বিস্ময়ের সঙ্গে লালচাঁদ আবিস্কার করেন, তাদের জীবনপ্রবাহের সমান্তরালে কিভাবে চলছে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, সংগীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, সংবাপত্র, বই ও অন্যান্য মাধ্যমের বাস্তবতা। প্রাকৃত জগতের পাশাপাশি মিডিয়া-জীবনের এই অবস্থান বিপজ্জনকও হয়ে ওঠে কখনও। জীবন-সত্যের সঙ্গে হঠাৎ কখনও স্থান বদল করে নেয় শিল্পের সত্য। জিনিয়া নামের ওই আশ্চর্য রমণীর প্রতি আচ্ছন্নতায় লালচাঁদ বুঝতে পারেন, দুই বাস্তবতাকে প্রায়ই গুলিয়ে ফেলছেন তিনি। ফলে ক্রমেই অস্পষ্ট ঝাপসা হয়ে পড়ছে সত্য। বিনোদন কেন্দ্রর সাধারণ-অসাধারণ নর-নারীদের কেউ-কেউ জরুরি ভূমিকা নিয়ে দেখা দেয় লালচাঁদের জীবনে। তার প্রোডাকশন হাউসগুলোর গবেষক ও কর্মী; গেস্টহাউস, ক্লাব প্রভৃতিতে জড়িত স্থানীয় উদ্যোক্তা, জীবন ও শিল্পের দুই বাস্তবায় বিভক্ত ক্ষতবিক্ষত মানুষ। তাদের সুখ-দুঃখ, কামনা-বাসনা, প্রেম ও হিংসা নিয়ে আবর্তিত হয়েছে এ উপন্যাসের কাহিনী।
Sazzad Qadir- জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ই এপ্রিল, টাঙ্গাইলের মিরের বেতকা গ্রামের মাতুলালয়ে। তাঁর পিত্রালয় ওই একই জেলার দেলদুয়ারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স ও এমএ পাস করেছেন যথাক্রমে ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে। শিক্ষাজীবন শেষে অধ্যাপনা করেছেন করটিয়া’র সা’দত কলেজে, পরে সহকারী সম্পাদক ছিলেন সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও দৈনিক সংবাদ-এর। বার্তা সম্পাদক ছিলেন দৈনিক দিনকালের। ১৯৭৮-৮০ সালে ছিলেন গণচীনের রেডিও পিকিং-এর ভাষা-বিশেষজ্ঞ। ১৯৯৫-২০০৪ সালে ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক। বর্তমানে দৈনিক মানবজমিন-এর যুগ্ম সম্পাদক। সাযযাদ কাদির নেশায় কবি, পেশায় সাংবাদিক। কবিতা ছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, নাটক। পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন ইতিহাস থেকে কল্পবিজ্ঞান পর্যন্ত অনেক বিচিত্র ও কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়ে। বিদেশের জনপ্রিয় উপন্যাস থেকে রসমধুর লোককাহিনী পর্যন্ত অনেক স্মরণীয় সাহিত্যসম্ভার তিনি উপহার দিয়েছেন পাঠক-পাঠিকাদের। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : আজব তবে গুজব নয়, ইউএফও: গ্রহান্তরের আগন্তুক, উপকথন, উপকথন আবারও, উপকথন আরও, উপকথন ফের, গল্পগাছা, তেপান্তর, বরিবল নামা, মনপবন, সবার সেরা, সাগরপার এবং রঙবাহার।