১৯৭৭ সাল। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাদের এজেন্টদের গতানুগতিক ষড়যন্ত্র ও গুপ্তচরবৃত্তির বাইরে একবারে ভিন্ন একটা অ্যাসাইনমেন্ট দেয়। ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাহেম বিগিন তাদের আদেশ দেন সুদানে আটকে থাকা ইথিওপিয়ান ইহুদি শরনার্থীদের উদ্ধার করে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য।
তিনি বলেন- 'শরনার্থীদের যেকোনো মূল্যে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে আসুন এবং অবশ্যই এই ইহুদি ভূমিতে।' তারই ধারাবাহিকতায় পরিকল্পনা করা হয় নতুন এক অভিযানের। তবে সেবার পুরোপুরি ভিন্ন কিছুর ছক আঁকে মোসাদ। ১৯৮০ সালের শুরুর দিকের কথা। আক্রমণ চালাতে পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কোনো আগন্তুককে শত্রুভূমিতে পাঠানোর পরিবর্তে, সুদানের দূরবর্তী এক পরিত্যক্ত হলিডে ভিলেজে গুপ্ত ঘাঁটি গড়ে তোলে মোসাদ। যেখানে কদাচিৎ কিছু দর্শনার্থীর দেখা মিললেও, জনসাধারণের চাপ কম এবং ঘনবসতি নেই। তারপর সেখানে একদল সক্রিয় এজেন্ট মোতায়েন করা হয় শরনার্থীদের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করার জন্য। পরবর্তীতে নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও বিপদসংকুল পরিবেশের মুখোমুখি হয়ে তারা শরনার্থীদের ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করে সমুদ্র ও আকাশপথে ইসরায়েলে প্রেরণ করে। এই বইয়ের লেখক গ্যাড সিমরন সেই অভিযানেরই একজন সদস্য ছিলেন।
বইটি ১৯৯৮ সালে প্রথম হিব্রু ভাষায় প্রকাশিত হয়। ইংরেজি ভাষায় এর পরিমার্জিত সংস্করণে 'কীভাবে এই অভিযানের পরিল্পনা করা হয়েছিলো এবং কীভাবে মোসাদ টিম সুদানে তাদের এই অভিযানে সফল হয়' হাতেকলমে সেসবের রোমাঞ্চকর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। লেখা হয়েছে ব্যক্তিগত ঝুঁকি এবং দিনের ঝকমকে আলোয় দর্শনার্থীদের ভয় থাকা সত্ত্বেও স্থানীয়দের আড়ালেই রাতের বেলা শরনার্থীদের উদ্ধার করার কথা। এছাড়াও বইটিতে অভিযানের শেষদিকে আমেরিকার সংশ্লিষ্টতার কথাও আলোকপাত করা হয়েছে। তুলে আনা হয়েছে হোয়াইট হাউসের অনুমতি সাপেক্ষে ইথিওপিয়ান ইহুদি শরনার্থীদেরকে উদ্ধারে আকাশপথে আমেরিকার সাহায্য করার বিষয়টি এবং সিআইএ এর খার্তুম স্টেশন থেকে মোসাদ কর্মীদের আশ্রয় ও লিবিয়ার গুপ্তচরদের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে সহায়তার কথা। আরো বলা হয়েছে মেইলের মাধ্যমে মোসাদ অফিসারদের অনুপ্রেরণা দেবার প্রসঙ্গেও। সবমিলিয়ে লেখক গ্যাড সিমরন দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণে আদর্শবাদী বীরত্বের গাঁথা বইটিতে সাবলীল ভঙ্গিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন, যা সহজেই পাঠককে মুগ্ধ করবে।