"গোয়েন্দা কাহিনিসমগ্র-৮" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: নীল কিউব ডােবার নতুন প্রবেশ পথ খুঁজে বের করল ‘নীল যােদ্ধারা। মানুষ হয়ে ঢোকা সম্ভব না ওখানে, তেলাপােকায় রূপান্তরিত হতে হবে। কিন্তু দশ ফুট লম্বা শতপদী ভয়ঙ্কর টোটেমরা যে তেলাপােকার মত ছােট্ট প্রাণীকে খাবার হিসেবে বেছে নেবে, কে জানত! হঠাৎ করেই থেমে গেল যেন সময়। টোটেম, ভাগাে, টুয়াটারা সবাই স্তব্ধ, অনড়। নীল কাব্যের ছয় সদস্য কিশাের, তিয়াপা, মুসা, সিসি, রবিন আর টিটুনের দুরবস্থা এখন রীতিমত দুঃস্বপ্ন। বাঁচাতে পারে শুধু মহাক্ষমতাধর ইয়ন, কিন্তু বিনিময়ে যা চেয়ে বসল, তা পূরণ করাও অসম্ভব। বজ্রমানব ইণ্ডিয়ানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করেছে শ্বেতাঙ্গরা। বেইমানি সইতে পারে না ইণ্ডিয়ানরা, সিদ্ধান্ত নিল শ্বেতাঙ্গদের তাড়াবে। একজন বিদেশীকেও থাকতে দেবে না রক্তে লাল হতে শুরু করল মরুভূমির বালি। পাহাড়ঘেরা ছােট্ট এক র্যাঞ্চে আটকা পড়েছে সুন্দরী এক মহিলা আর তার শিশু সন্তান। তাদের ওপরও নজর পড়েছে ইণ্ডিয়ানদের, খুন হয়ে যেতে পারে যে কোন মুহূর্তে। বাঁচাতে পারে একমাত্র জিম স্যাণ্ডারস। কিন্তু কোথায় সে? মৃত্যুর মুখােমুখি : পানি খাওয়ার আর শক্তি নেই। ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙলে দেখল পানির কিনারে পড়ে আছে। মুখ বাড়াতেই পানির নাগাল পেল। যতটা পারল খেলাে। তবে খেতে পারল খুব অল্পই। দেখল, ক্ষতগুলাে থেকে আবার রক্ত পড়ছে। প্রতিটি জখমের ব্যথা আলাদা করে বুঝতে পারছে না। সমস্ত শরীরেই ব্যথা, একরকম ব্যথা। আবার ঘুমিয়ে পড়ল সে। মারাত্মকভাবে জখম করেছে ওকে গ্রিজলি ভালুকটা। কমাণ্ডো : কাবু করা গেল না দৈত্যটাকে, তারেকের মনে হলাে পুরু রবারের গায়ে আঘাত হানল ওর পা । পিপার মত বুকের ভিতর থেকে ঘড়ঘড় শব্দ বেরােচ্ছে রিংপুর-ক্রুদ্ধ ভালুকের মত, দুই হাত ছড়িয়ে প্রতিপক্ষকে জড়িয়ে ধরার জন্য ঝাপ দিল সামনে। দ্বিতীয়বার আর রিংপুর আলিঙ্গনে ধরা দিল না তারেক। পিছিয়ে একটা দরজার কাছে চলে এসেছে। পাল্লার বাজু ধরে দোলা দিয়ে চলে এল ভিতরে। কিন্তু পাল্লা ছাড়ল না
রকিব হাসান বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের স্রষ্টা ও কিশোর-কিশোরীদের সেরা পছন্দের লেখকদের শীর্ষ তালিকার একজন। তাঁর মাধ্যমেই বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা গোয়েন্দা কাহিনি ও তিন গোয়েন্দা সিরিজের সাথে পরিচিত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি বহু ক্লাসিক ও কিশোর রোমহর্ষক সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। লেখালেখির দীর্ঘ ৫০ বছরে চারটি প্রজন্ম অতিবাহিত হলেও আজও তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। মূলত তিনি নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন বিধায় মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবুও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশ বিদেশে তাঁর লক্ষ লক্ষ পাঠকশ্রেণি রয়েছে। যাদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনী এবং পরবর্তী প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের কাছেও রকিব হাসান অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। বর্তমান প্রজন্মের পাঠক-ভক্তদের কাছেও ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্রটি অসম্ভব জনপ্রিয়। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও কিশোর-কিশোরীসের সেরা পছন্দের এই গুণী লেখকের জন্ম কুমিল্লায়, ১৯৫০ সালে। মূলত এক সময়ে পাঠকের হাতে স্বল্পমূল্যে বই তুলে দিতে এবং নিত্য নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে ‘পেপারব্যাক সংস্করণে’ প্রকাশিত স্বনামে-বেনামে তাঁর লেখা বহু বই তিন দশক ধরে বেস্টসেলার ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। আজও তাঁর প্রকাশিত বইগুলো সমান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সকল কিছুকে ছাপিয়ে তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্র কালজয়ী জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। স্বনামে-বেনামে ও ছদ্মনামে এই তিন ক্যাটাগরিতেই তাঁর জনপ্রিয়তায় কোন ছেদ পড়েনি। তিনি সকল ধরনের মিডিয়া ও প্রচার প্রচারণাকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করতেন বলে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই লেখকের ফেসটি তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু আমরা বাস্তবতায় দেখেছি যে, যখন কোন পাঠক একটু জানতে পেরেছেন যে, রকিব হাসান বইমেলায় অমুক প্রকাশনীতে আছেন, তখন একে একে নিমিষেই প্রচÐ ভীড়ের সৃষ্টি হতো। এমনকি পাঠকের ভীড়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে যেতো। এই গুণী লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় পাঁচ শতাধিক। তাঁর লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে, ছদ্মনামে। স্বনামে প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল অনুবাদগ্রন্থ, ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’। এরপর অনুবাদ করেছেন জুল ভার্ন, জিম করবেট, কেনেথ অ্যান্ডারসন, মার্ক টোয়েন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, ফ্রেড জিপসন, রেনে জুঁইঅ, এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল-এর মত বিখ্যাত লেখকদের অনেক ক্লাসিক বই। অনুবাদ করেছেন মহাক্লাসিক ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’ ও এডগার রাইস বারোজ- এর ‘টারজান’ সিরিজ। তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে ছোটদের নিয়ে রচিত ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজটি। এই সিরিজের তিনটি মূল চরিত্র ‘কিশোর-মুসা-রবিন’কে নিয়ে লিখেছেন আরও তিনটি সিরিজ ‘তিন বন্ধু’, ‘তিন কিশোর গোয়েন্দা’ ও ‘গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন’। লিখেছেন ‘কিশোর গোয়েন্দা’ সিরিজ ‘খুদে গোয়েন্দা’ সিরিজ, জাফর চৌধুরী ছদ্মনামে ‘রোমহর্ষক’ সিরিজ এবং আবু সাঈদ ছদ্মনামে ‘গোয়েন্দা রাজু’ সিরিজ। এ ছাড়া কিশোরদের জন্য বেশ কিছু ভূতের বই ও সাইন্স ফিকশনও লিখেছেন তিনি। তাঁর লেখা কিশোর-কিশোরীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে এবং সেরা বিনোদন যোগায়। আমরা এই গুণী ও অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখকের সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। মহান আল্লাহপাক আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করুন। আমীন।