সােনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি নীলা। বস্তিতে জন্ম না হলেও অসৎ পিতার দায়িত্বহীনতার নির্মম পরিহাসে এক অসহায় মাকে তার দুধের শিশুসন্তানসহ ঠাই নিতে হয়েছিল সমাজের অন্ধকূপের এক বস্তিঘরে। সেখানেই নীলার বড় হয়ে উঠা। দারিদ্রতা, অশিক্ষা-কুশিক্ষা আর স্বাস্থ্যহীনতার মতাে সামাজিক ব্যাধির বৈরি পরিবেশে তার জীবনের অনেকটা সময় কেটে গেলেও বড় হবার দৃঢ় সংকল্পে তাকে এগিয়ে যেতে হয়েছে শারীরিক-মানসিক নানা বঞ্ছনার সাক্ষী হয়ে। শৈশব, কৈশাের ও যৌবনের নিগুঢ় অনুভূতিগুলাে প্রকৃতির ঋতু বৈচিত্র্যের মতাে তার জীবনেও বর্তমান ছিল। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটানাে জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলাে ঘরের চৌকাঠেই সীমাবদ্ধ থাকায় সে জীবন ছিল অন্যরকম বিলাসিতায় পূর্ণ। বেঁচে থাকার তীব্র লড়াইয়ে স্কুল-কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠে পৌঁছেও তাকে নেহায়েৎ সাদামাটা জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। কিন্তু বাস্তবের সমস্ত প্রতিকূলতা হেরে গেল ভালােবাসার বিশাল রাজত্বের সুখ-স্বপ্নের বিলাসে। হৃদয়ের গােপন আঙিনার নীলপদ্মে ভালােবাসার অবিরাম খেলা চলতাে নীরবে নিভৃতে। এই সুখ-স্বপ্নের বিভােরতায় নীলা যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসেবে যােগদান করলাে। তখন তার জীবনে নেমে এলাে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ছন্দপতন। সেই সুপ্ত ভালােবাসা অপ্রকাশিতই রয়ে গেল। তারবিহীন তানপুরা যেমন সুর পায় না তেমনি অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তিতেও নীলার জীবনে ছন্দ মেলেনি। তবু দৃঢ়চেতা নীলা এক অব্যক্ত যন্ত্রণা বুকে নিয়ে আবারাে ঘুরে দাঁড়ালাে; জীবনের নানা স্বপ্ন বাস্তবায়নের সিড়ি হলাে তার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা। মানবিক প্রয়ােজনে এদের সাফল্য আলোকবর্তিকার মতাে অনেকাংশে এগিয়ে নিল নীলর স্বপ্নগুলােকে। সেই স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে উচ্চশিক্ষার্থে সে পা বাড়ালাে বহির্বিশ্বে । নীলার মতাে জীবনযােদ্ধারাই এই পৃথিবীকে উপহার দেবে একটা নতুন গ্রহ। এই অনাকাতিত সামাজিক নিস্পেষিত-নিপীড়িত জীবন যেন কোনাে মানবমনবীর না হয় । - স্বপ্না সাহা।
স্বপ্ন সাহা। ১৯৬৭ সালের ১৩ই নভেম্বর ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার পাইকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বপ্ন সাহা। সাবেরা-সােবহান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ব্রাহ্মনবাড়িয়া মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার ‘আদর্শ মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষিকা পদে প্রায় বারাে বছর শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে তিনি গ্রিসে অবস্থান করছেন।