শুধু ঘটনা এবং সংলাপের আধিক্য নয়। বরং এ দুইয়ের ধারাবাহিকতাকে ছাপিয়ে জীবনবােধ ও জীবনদর্শন নিয়ে একগুচ্ছ ভাব ও ভাবনার ছন্দময় বুনােট সন্ধ্যাপুরাণ। একদিকে গ্রামীণ ভূমিহীন দরিদ্র পরিবার, সারাবছর যাদের টানাপােড়েনের মধ্যে জীবন যাপিত হয়। জীবিকা নির্বাহের জন্য করতে হয় নিরন্তর সগ্রাম। অন্যদিকে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা গ্রামীণ রাখাল জীবনের বিলুপ্তি। গােধূলিবেলায় মেঠোপথ ধরে একপাল গবাদি পশু নিয়ে বাঁশি অথবা পাঁচন হাতে রাখাল বালকের সেই যে ঘরে ফেরা, এখন আর চোখে পড়ে না সেই সুখচিত্র। চাঞ্চল্যকর সেই রাখালজীবনের পাশাপাশি গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এই আখ্যানে উঠে এসেছে। শিল্পের বিকাশ এবং আধুনিক কৃষিযন্ত্রের আগমনের ফলে গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থার পরিবর্তন এবং গেরস্ত ও মজুর কামলাদের ওপর এর প্রভাব চিরায়ত গ্রামীণ অবকাঠামােকে ভেঙে কী করে নতুন অবকাঠামােয় দাঁড় করাচ্ছে, গ্রাম হয়ে উঠছে মফস্বল, বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ভরাট করে গড়ে উঠছে নিত্য নয়াবাস আর খামারশিল্প। মূল ঘটনাস্রোতের সাথে এইসব বিবর্তন ও তার কারণগুলাে ঐতিহাসিক ও বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। সন্ধ্যাপুরাণ তাই একইসঙ্গে একটি উপাখ্যান, আবার একটি বাস্তবতা ও প্রামাণ্য দলিল। বাঙালিত্ব, বাঙালির ধর্মতত্ত্ব এবং বাউল ও মরমিবাদ এখানে গান-কথায়, গীতিকা ও গাঁথায় সুচারুভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যা বাঙালি পাঠককে একইসাথে ভাব ও বাস্তবতার স্বাদ প্রদান করবে। সেইসাথে বাঙালির নৃ-তত্ত্বে মিশে থাকা চিরায়ত গ্রামপ্রীতি ও আকুলতাকে বাড়িয়ে তুলবে বহুগুণে।