"গারিনের মারণরশ্মি " বইয়ের পেছনের কভারের লেখা: আমেরিকায়, বর্ণ বিদ্বেষের আকারে পল্লবী ও প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে দক্ষিন আফ্রিকায়। একজন হটকারি মানুষ নতুন ধরনের বিপুল শক্তি সম্পন্ন মারণাস্ত্র হাতে পেয়ে এবং নিজেকে এক শক্তিমান ব্যক্তিত্ব বলে ধারনা করার পর কীভাবে নিজের ইচ্ছা পৃথিবীর সকলের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে সেই সম্পর্কে এই উপন্যাসে যে সাবধানবাণী আছে তা আজ দিব্যবাণী হয়ে বাজছে। বলাই বাহুল্য, বর্তমানে পৃথিবীর সবকিছু তেমন নেই, মারণাস্ত্র আজ অন্য ধরনের। তবে হ্যা, প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে তলস্তয় যেন এ ব্যাপারে অনেকখানি অনুমান করতে পেরেছিলেন। গারিনের পরাবৃত্ত-যন্ত্রের তাপ রশ্মি যেন অনেক পরিমাণে আধুনিক বিজ্ঞানের তৈরি লেজার রশ্মির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু লেজার আজ এক দশকেরও ওপরে হলাে শান্তির জন্য কাজ করছে, চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে শুরু করে ওয়েল্ডিং পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের সেবা করে আসছে। ভবিষতেও তা মহাকাশে নক্ষত্রযুদ্ধের হাতিয়ারে পরিণত না হয়ে শান্তিপূর্ণ বিজ্ঞানের সেবা করে যাবে। ...এককালে কোন কোন বিশেষজ্ঞ তলস্তয় কে বলেছিলেন যে ইঞ্জিনিয়ার গারিনের রশ্মি যদি ফোকাস করা যেত এবং একটি গুচ্ছে সংগ্রহ করা যেত তা সম্ভব হতাে কোনাে অবৃত্তমূলক যন্ত্রে—পরাবৃত্ত-যন্ত্রে নয়। আলেক্সেই তলস্তয় হেসে উত্তর দিয়েছিলেন যে তার বইয়ের অনুসরণে, এমনকি আঁকা ছবির সাহায্যেও মারণরশ্মি পাওয়া সম্ভব নয় এবং পরাবৃত্ত তার দরকার হয়েছিল শিল্পসম্মত অতিশয়ােক্তির প্রতীকস্বরূপ—যা উপন্যাসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। উপন্যাসের একটি অংশ রাজনৈতিক ইস্তেহারের চরিত্র। বহন করে। ধনকুবের রােলিংকে, বৃহৎ পুঁজির শুক্তি এবং অর্থের দুনিয়ার তার ক্ষমতাকে লেখক উজ্জ্বল ও তীক্ষ্ম অথচ সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসযােগ্য ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন। গারিনের হঠকারিতার পরিসমাপ্তি তার পতনে। লেখক তাঁর প্রতিভার গুণে, ভবিষ্যৎ দর্শনের ক্ষমতাবলে আমাদের সকলের মনে এই দৃঢ় বিশ্বাস সংক্রমন করে দেন যে, যারা লেসার রশ্মিকে তামসিকতার রশি হিসেবে কাজে লাগানাের চেষ্টা করবে এবং বিজ্ঞান থেকে ফায়দা উঠিয়ে আজকের দিনের যত রােলিং আর তাদের সহােযােগীদের প্রভু পৃথিবীর উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে তাদেরও ওই একই দশা ঘটবে।