ভাষা-আন্দোলন গবেষণাকেন্দ্র, গৌরীগ্রাম, পাবনার ভাষাসংগ্রামী গ্রন্থমালার দ্বিতীয় গ্রন্থ ভাষাসংগ্রামী এম এ ওয়াদুদ। এ গ্রন্থে ভাষা-আন্দোলনের সময়কার পত্র-পত্রিকা, দলিলপত্র, আলোকচিত্র, ভাষা সংগ্রামীদের স্মৃতিচারণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের ইশতেহার এবং ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসের স্বীকৃত বই-পুস্তকের আলোকে ভাষা-আন্দোলনে এম এ ওয়াদুদের অবদান যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রাসঙ্গিকভাবে এসেছে তাঁর জন্ম, শৈশব, শিক্ষা, রাজনীতি ও কর্মজীবনের নানা প্রসঙ্গ। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান ভাবধারার বিপরীতে যে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ধারার রাজনীতি গড়ে ওঠে, এম এ ওয়াদুদ ছিলেন তার অগ্রসেনানীদের একজন। গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রভৃতি রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠনের প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনীতির সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে যেমন, তেমনি ইত্তেফাক-এর নীতিনির্ধারকদের একজন হয়ে এম এ ওয়াদুদ পূর্ববঙ্গের ভাষা-আন্দোলন ও স্বাধিকার-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে রেখেছেন অনন্য অবদান। ভাষা-আন্দোলনের শুরু থেকেই এম এ ওয়াদুদ এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। এ আন্দোলনের সাংগঠনিক ভিত নির্মাণ, কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৪৮ এবং ১৯৫২; দুই পর্বের ভাষা-আন্দোলনেই তিনি পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং কারাভোগ করেছেন। এ গ্রন্থে ভাষাসংগ্রামী এম এ ওয়াদুদের ভাষা-আন্দোলনে অবদানের অনুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। গ্রন্থটি পাঠ করে ইতিহাসের অনুসন্ধানী পাঠক ও নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসের অন্যতম অগ্রনায়ক এম এ ওয়াদুদের ভূমিকা ও অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে।
ড. এম আবদুর ইতিহাস-ঐতিহ্যসন্ধানী গবেষক। সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ তিরিশের অধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো - ভাষা-আন্দোলন-কোষ, রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন : জেলাভিত্তিক ইতিহাস, ত্রিশোত্তর বাংলা কাব্যে বিচ্ছিন্নতার রূপায়ণ, বাংলা কাব্যের স্বরূপ ও সিদ্ধি-অন্বেষা, শহীদ কাদরীর ত্রিভুবন, রবীন্দ্রনাথ উত্তর-আধুনিকতা ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন, পাবনায় ভাষা-আন্দোলন, সিরাজগঞ্জে ভাষা আন্দোলন, আনিসুজ্জামান, সুচিত্রা সেন, বন্দে আলী মিয়া : কবি ও কাব্যরূপ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা, আওয়ামী লীগ ও ভাষা আন্দোলন প্রভৃতি। নেশা লেখালেখি হলেও পেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা। এক সময় ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার লাভ করেছেন। তাঁর জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর। জন্মস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রামে।