জীবন সত্তার গহিন গোপন রক্তপাতের অভিন্ন অভিধানের নাম গল্প। এমন কোন জীবন আছে, যে জীবনের কোনো রক্তরক্ষণ নেই? মানব চরাচরের প্রতিজন, হোক যত ক্ষুদ্র কিংবা বিশাল ক্ষমতাধর, মানুষ মাত্রই সত্তার ক্ষরণে ছিন্নভিন্ন হতেই হবে। গল্পের কলকব্জায় একজন গল্পকার সেই ক্ষরণের ভগ্নাংশ শব্দ আর তিক্ত অনুশোচনার আখ্যান পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেন শিল্পীত কল্যাণযাত্রায়। শাণিত গল্পকার মনি হায়দার পঞ্চাশ বছরের গল্পযাত্রায় যে অভিজ্ঞান অর্জন করেছেন, পঞ্চাশ গল্পের ভূগোলে সেই অভিজ্ঞতার সামান্য তিলক উঠে এসেছে। কত চরিত্র, কত আখ্যান, কত প্রেম, কত বিরহ, কত বিষন্ন বেদনা- গল্পের শ্যামল শরীরে জন্ম দিয়েছেন মনি হায়দার। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র সংশ্লেষে দানা বাঁধে মনি হায়দারের গল্পে। মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েকটি গল্পে পাকিস্তানি আর্মি ও এদেশীয় আত্মপ্রতারক জামায়াতীদের রক্তকামড়ে একাত্তরের ক্ষত-বিক্ষত বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন সঠিক শৌর্যে, প্রজ্ঞার আলোয় ও চেতনার নিঃশব্দ আলিঙ্গনে। বঙ্গবন্ধুকে চরিত্র করে গল্প আছে কয়েকটি। প্রতিটি গল্প প্রখর চেতনায় নির্মিত, যেখানে বঙ্গবন্ধু মাটি থেকে পৌঁছে যান অসীমে। প্রেম! নারী পুরুষের প্রথম পরিচয়। পঞ্চাশ গল্পের ডামাডোলে প্রেমের গল্পও প্রবেশ করেছে প্রেমিক সত্তার চুম্বন জাগরণে। বাংলার লোকায়ত জীবনের চৌকাঠ মানেই লোকজ ভূমির বিস্তার। গ্রামীণ পরিকাঠামোয় অংকিত কয়েকটি গল্পে ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে’, অভিলাষ বুনন করা হয়েছে। যেসব গল্পের পটভূমি ধরে জেগে উঠছে শাশ্বত বাংলার মানচিত্র। নগর জীবন মূলত মানুষের সর্বশেষ স্বমেহনের কলুষিত সমাধি। এই সমাধিতে আশ্রয় নিয়ে মানুষ কেমন করে বামন ও বানরে রূপান্তরিত হচ্ছে, তারই নির্ভুল গাথা আঁকা আছে কয়েকটি আত্মপ্রতারিত গল্পে। আমরা নির্দ্ধিধায় লিখতে পারি, মনি হায়দারের পঞ্চাশ বছরের পঞ্চাশটি গল্পের আখ্যানে মানুষের মনোভৌমিক চেতনার সর্বনাশ যেমন বিচিত্র রেখায় অংকিত হয়েছে, তেমনি সুন্দরের সঙ্গে সর্বনাশেরও বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন শিল্প চাতুর্যের রসিক পানপাত্রে।
জন্ম ১৯৬৮ সালে পহেলা মে [সার্টিফিকেট অনুসারে] বৃহত্তর বরিশালের পিরোজপুর জেলার ভানডারিয়া উপজেলার বোথলা গ্রামে, প্রমত্ত কচানদীর পারে। শৈশব থেকে লেখালেখির শুরু।