"দায়" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে আসে স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়া একজন গ্রামের নিরীহ সরল ছাত্র মনু মিয়া। তার আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশ স্বাধীন হলে। বদলাবে সবকিছু। শােষণ নিপীড়ন ও নির্যাতনের অবসান হবে। মানুষের দুঃখ দৈন্য ঘুচবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর তার স্বপ্নভঙ্গ হয়। নানা মত ও পথের লােকেরা গ্রামে-শহরে। রাজনীতির নামে প্রতিহিংসা ও হত্যাকাণ্ড চালাতে শুরু করে। বিভ্রান্ত বাম আন্দোলন শ্রেণিহীন সমাজ নির্মাণের মূলে কুঠারাঘাত করে। মনু মিয়াকে গ্রাম ছাড়তে হয়। শহরে মানবিক কিছু মানুষের সান্নিধ্যে এলেও তার স্বাধীনতার স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু- উপন্যাসের নায়ক কিশাের মনু মিয়াকে ভয়ঙ্করভাবে আহত করে। সে শহর বন্দর গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে চায় কিন্তু এক ভালােবাসার। মানুষ তাকে আঁকড়ে রাখে। এক জ্বলন্ত চুল্লির ওপর দাঁড়িয়ে। সে নিজেকে নিঃশেষ করে দিতে চায়। কিন্তু সময় তাকে নিয়ে। যায় সামনে যেখানে সে পায় আরাে এক নতুন পথ ও পৃথিবীকে। যে পৃথিবীতে মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ। লেখক মন্টু চৌধুরীর উপন্যাস আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের দলিল। আমার পাঠের অভিজ্ঞতায় আর কোনাে লেখকের লেখায় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী এই স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস মন্টু চৌধুরীর মতাে আঁকতে পারেননি। মন্টু চৌধুরীর। ভাষাভঙ্গি সাবলীল এবং নির্মেদ। এক সাহসিক বাক্যবদ্ধ তাকে দিয়েছে গল্প বয়নে মুন্সিয়ানা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কথাসাহিত্যের ইতিহাসে মন্ট চৌধরীর ‘দায়’ উপন্যাস ব্যতিক্রমী সংযােজন। বইটির বহুল পাঠ ও প্রচার কামনা করি।