রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সকল বইতে তার বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলো লিপিবদ্ধ করে গেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাশিয়ার চিঠি’ । সোভিয়েত সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি রাশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানকার অবস্থা দেখে যে চিঠিপত্র তিনি লিখেছিলেন সেগুলোই তার রাশিয়ার চিঠি নামে পরিচিত। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর রাশিয়ায় তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন; কেননা নোবেল প্রাপ্তির বছরেই, অর্থাৎ ১৯১৩ সালেই গীতাঞ্জলি’র অনুবাদ রুশপত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাশিয়ার চিঠিগুলোতে ১৯৩০ সালে অর্থাৎ বিপ্লবের মাত্র তেরো বছর পর। সেখানকার অবস্থা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন । সেই সঙ্গে তিনি রাশিয়ার কিছু প্রশংসা ও সমালোচনাও করেছিলেন। চিঠিগুলোতে তিনি রাশিয়া সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক নির্মাণ, মানবিকতা, সাম্যচিত্ত জাগিয়ে তোলার নানা শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে অনেক কিছু লিখেছেন যা এখনো দারুণভাবে পাঠযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের অভ্রভেদী আলোকস্তম্ভ। তাঁর হাতে পূর্ণতা পেয়েছে অসম্পূর্ণ বাংলা সাহিত্য । তিনি একাই যে পরিমাণ সাহিত্য-সম্পদ সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত বিরল । কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, চিত্রকলা, ভ্রমণ-সাহিত্য, পত্র-সাহিত্য সবকিছুতেই তিনি শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দান করেছেন। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে তিনি শুধু নিজেকেই সম্মানিত করেননি, বাংলা সাহিত্যকেও মর্যাদার আসনে। অধিষ্ঠিত করেছেন । ১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ৭২ বছর সৃষ্টিক্ষম থেকে ৮০ বছর বয়সে। ১৯৪১ সালে দিগ্বিজয়ী এই প্রতিভাবান পুরুষ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।