গোপাল ভাঁড়ের পরিচয় নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা। কে ছিলেন গোপাল ভাঁড়? এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। যতটুকু পাওয়া গেছে, তা নিয়েও আছে নানান মত। একটা তথ্য সবাই মোটামুটি মেনে নিয়েছেন- গোপাল ভাঁড় ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারের অন্যতম সদস্য। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদদের মধ্যে ছিলেন কবি ভারতচন্দ্র। ভারতচন্দ্র লিখেছেনÑ অতিপ্রিয় পারিষদ শঙ্কর তরঙ্গ হরষিতে বলরাম সদা রঙ্গভঙ্গ। ভারতচন্দ্রের রচনা থেকে দুজন কৌতুকী পারিষদের নাম জানা যায়-শঙ্কর তরঙ্গ ও বলরাম। এখানে গোপালের নাম নেই। তাহলে কি গোপাল বলে কেউ ছিলেন না? নাকি ইচ্ছে করেই গোপালের নাম বাদ দেয়া হয়েছিল? রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজবাড়ির মহাফেজখানায় গোপালের অস্তিত্ব প্রমাণের কোনো দলিলও পাওয়া যায় না। কৃষ্ণচন্দ্রের পঞ্চরতেœর আরেক রতœ রামপ্রসাদও তার কোনো লেখাতে গোপালের নাম নেননি একটিবারের জন্যও। অথচ গোপাল আর রামপ্রসাদের নাকি গলায় গলায় ভাব ছিল। তাহলে? গবেষণা চলছে গোপালের অস্তিত্ব নিয়ে। কিন্তু আড়াইশো বছরের মধ্যে গোপাল হারিয়ে গেলেন কী করে? একজন গোপাল গবেষক অধ্যাপক সুকুমার সেন। তাঁর মতে, গোপাল ভাঁড়ের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। লেখক পরিমল গোস্বামীও জানিয়েছেন, অষ্টাদশ শতকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় গোপাল ভাঁড় নামে কোনো বিদূষক ছিলেন বলে প-িতেরা অন্তত স্বীকার করেন না। অথচ গোপালের জনপ্রিয়তার কিন্তু কমতি নেই। লন্ডনে থাকার সময়ে গোপাল ভাঁড় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছেন পরিমল গোস্বামী। তাঁর বয়নে জানা যায়, ষোড়শ শতকে ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথের দরবারে গ্যাব্রিয়েল ভ্যান্ডারবিল্ট নামে একজন বিদূষক ছিলেন। খুব কাজের চাপের মধ্যে মাঝে মাঝে নিজের মন হাল্কা করার জন্য রানি এই বিদূষককে মাইনা দিয়ে নিয়োগ করেছিলেন। এই গ্যাব্রিয়েলকে এলিজাবেথ ডাকতেন ‘গেবল ভ্যান্ড’ বলে। এই গ্যাবলের নামই দেশে ঘুরতে ঘুরতে একসময় গোপাল ভাঁড় হয়ে গেছে।’ পরিমল গোস্বামীর এই তত্ত্ব কিন্তু এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষেরই পছন্দ হয়নি। একজন বিদেশিকে গ্রামবাংলার মানুষ এতটা আপন করে নেয়ার কথা নয়। তছাড়া শুধু গ্যাবল ভান্ড নয়, রানির আরো কয়েকজন বিদূষক ছিলেন। সবার মধ্য থেকে গ্যাবল ভান্ডই কেন গোপাল ভাঁড় হয়ে উঠবেন। গোপাল ভাঁড়কে নিয়ে রহস্যের শেষ নেই।
হাশিম মিলন। জন্ম : ৩১ জানুয়ারী ১৯৭২, ঝিনাইদহ শিক্ষা: এম এস এস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) এম বি এ (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা: ১১টি মূলত: ছড়া ও কবিতায় বিচরণ নব্বই দশক থেকে লেখালেখির আঙিনায় দীপ্ত উপস্থিতি।