অগত্যা ঘাটলা পারের রাস্তা ধরে একটি ছায়ামূর্তি স্পষ্ট হয়ে উঠল। যতটুক বোঝা যাচ্ছে পরনে তার সাদা জ্যাকেট, কাঁধে ঝোলানো আছে একটি ছোট ব্যাগ যেন সে সরল খোয়াবে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে আসছে বাড়ির দিকে। এই হাঁটার ধরন, শরীরের অবয়ব বড্ড চেনা তার। ধীরে ধীরে মানুষটার মুখটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। তৎক্ষণাৎ জ্যোৎস্না এক ছুটে বেরিয়ে গেল ঘরের বাইরে, গায়ের চাদরটা খসে পড়ে রইল মেঝেতে। তবে যে গতিতে সে ঘর ছেড়ে বেরোল, ক্রমশই তা মন্থর হলো। দাওয়ায় আসতেই তার পা আর চলল না। ভূতগ্রস্তের মতো দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। ঘড়ির কাঁটার মতো টিক টিক আওয়াজ তুলে বেজে চলেছে হৃদপিণ্ডটা, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না পাচ্ছে তার। এতদিন! এতদিন পরে মানুষটা তবে সত্যিই এসেছে। সত্যিই কি এসেছে? না এ তার চোখের ভুল! কতবার ই তো এভাবে ছুটে এসে ঠকতে হয়েছে, কাছে যেতেই শ্রাবনের মেঘের মতো লুকিয়ে গেছে মানুষটা। না ডাকে সাড়া দিয়েছে, না ফিরে তাকিয়েছে! এবারও কি তাই! ভাবতে গিয়ে মুখটা গোল হয়ে এলো জ্যোৎস্নার, ওষ্ঠদ্বয়ে ফুলে উঠলো অপেক্ষমাণ কান্নায়। তখনই ছায়ামূর্তিটা কাছে এগিয়ে এসে মুচকি হাসলো। চাঁদোয়া দেওয়ার মতো করে দু'হাত মেলে বলল, ---জ্যোৎস্না! শব্দটা গিয়ে কানে বাড়ি খেতেই তৎক্ষণাৎ অনুরাগে মূর্ছা যেতে ইচ্ছে হল তার। কিছু শব্দ ঠোঁটের কাছে এসেও অনুচ্চারিত রয়ে গেল, কপালে ভাঁজ খেলল, দু'চোখে জল জমে চারপাশ ঝাপসা লাগতে লাগল। কত কী বলতে গিয়েও বলল না সে, বরং ডাঙ্গায় তোলা জ্যান্ত মাছের মত ছটফটিয়ে গিয়ে আছড়ে পড়লো ছায়া মূর্তিটির প্রশস্ত বুকে। আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ধরল তাকে।