"কিশোরীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ১১ বছরের কিশােরী। যুদ্ধের দিনলিপি লেখা ছিলাে না, লেখার কথা মনেও হয়নি। লিখে রাখিনি কোন টুকরাে কথাও। তবুও নিজের স্মৃতি, বড়দের মুখে শােনা কথার উপর ভিত্তি করে প্রিয় সামহােয়্যারইন ব্লগে লিখেছিলাম ‘স্মৃতি ১৯৭১!' এবং সে লেখা প্রচণ্ড পাঠক প্রিয়তা পেয়েছিলাে। সহব্লগার অনেকেরই দাবী ছিলাে লেখাগুলাে মলাটবন্দী করার। মুক্তিযুদ্ধের এই লেখাটার প্রতি আমার নিজেরও ছিলাে প্রচণ্ড রকম দুর্বলতা। '৭১ এ এক এগারাের কিশােরীর চোখে যা দেখেছি, শুনেছি তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অতি রঞ্জিত কিছুই নেই এখানে। অনেকেই বিভিন্ন সংকলনে আমার লেখাটি প্রকাশে আগ্রহ প্রকাশ করলেও আমি সাড়া দিতে পারিনি। আমার মনে হয়েছে এটা যেন লেখাটির সঙ্গে অন্যায় হবে। আমার উদ্দেশ্য পূরণ হবে না তাতে। আমি চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সেই রক্তাক্ত ১৯৭১ এর নয়টি মাসকে অনুভব করুক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তারা হৃদয়ে ধারণ করুক। আমার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করলেন সহ ব্লগার নীল সাধু। ভাইটি উৎসাহ দিলেন, আরাে ঘটনা যেন আমি তুলে ধরি। উনার দিক নির্দেশনা মেনে স্মৃতির পাশাপাশি সেই সময়কালের বিভিন্ন লেখা, স্মৃতিকথা থেকে অনেক ভুলে যাওয়া ঘটনা তুলে আনতে পেরেছি। স্মরণ করেছি ২৬শে মার্চের ভােরে সিলেট শহরে পাকবাহিনীর প্রথম গুলিবর্ষণে আহতদের মধ্যে থাকা আমার স্বামী সহ অন্য আহতদের কথা। আমার দেখা রাজাকার সফর উল্লা মােক্তারের আসল নামটি আমি ইচ্ছে করেই দেইনি। এক বছর কারাভােগ করে আমৃত্যু সে ব্যাক্তি দাপটের সঙ্গে বেঁচে ছিলাে। বিশিষ্ট সমাজ সেবকের পদক পেয়ে নিজেকে সমাজে তাকে প্রতিষ্ঠিত তাে এই আমরাই করেছিলাম। তাহলে আর তার নাম নিয়ে কি হবে? আমরা প্রকৃত মুক্তিযােদ্ধাদের উপযুক্ত সম্মান দিতে পারিনি। আমাদের এ ব্যর্থতাকে আগামী প্রজন্ম ক্ষমা করবে কিনা সেটা ভবিষ্যতই বলে দিবে।