আবেগ মিশ্রিত চাক্ষুষ বর্ণনায় বইটিতে প্রতিফলিত হয়েছে রাশিয়ার মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, ভলগোগ্রাডসহ সন্নিকটবর্তী লেখকের দর্শনকৃত সামগ্রিক ভূ-অবকাঠামোগুলো। জাদুঘর, চার্চ, স্থাপনা, পার্ক, নদী, বিদ্যাপীঠ, রাজপ্রাসাদ, জনমানুষ- লেখকের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থেকে বাদ পড়েনি কিছুই। তার উপর ভ্রমণকালীন সময়ে রাশিয়ায় মঞ্চায়িত বিশ্বকাপ ফুটবল লেখক সত্বায় সঞ্চারিত করেছে ভালোলাগার এক অমরত্বের স্বাদ; বিষ্ময়, আবেগ আর সম্মোহনীতে তিনি বারংবার প্রলুব্ধ হয়েছেন বিশ্বায়নের প্রেক্ষিতে পর্যালোচনায়। বইটিতে দৃশ্যমান অবয়ব আর আবহের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণের সঙ্গে সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে রাশিয়ার আবহমানকালের ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য, ঐতিহ্য-স্থাপত্য, প্রকৃতি, ভূগোল, বিজ্ঞানসহ রাশিয়ার জাতীয় সত্বার অপরিহার্য অঙ্গগুলি। চলতি পথে পরিচিত রাশিয়ান চরিত্রগুলোকে তিনি সম্পৃক্ত করেছেন এই ভ্রমণ আখ্যানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অতীতচারণ ব্যতীত বর্তমানকে যাচাই অসম্ভব। তাই কল্পনা আর ভাবনার জালে তিনি বার বার ডুব দিয়েছেন ইতিহাসের অমসৃণ পাতায়। শব্দচয়নের দ্বারা পাঠকদের মধ্যে জাগ্রত করতে চেয়েছেন কেভিয়ানরাশ সভ্যতা থেকে শুরু করে তাঁতাঁর, ক্রেমিয়ান, মোঙ্গল, অটোম্যান, সুইডিশ ইত্যাদি আগ্রাসনসহ জারতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি বহুমাত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে। আবার মূহুর্তের ভেতর সজ্ঞানে ফিরে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন কখনো মস্কোর রেড স্কয়ারে, কখনোবা সেন্ট পিটার্সবার্গের কোনো এক ব্রিজের উপর কিংবা ভলগোগ্রাডের ওয়্যার মিউজিয়ামের কোনো এক কোণে। প্রতিটি অধ্যায়ের শুরু হয়েছে সাত-সকালে, সমাপ্তি মধ্যরাতের নিদ্রাযাত্রায়-এ যেন একজন পরিব্রাজকের প্রতিদিনের বহুমাত্রিক ভ্রমণ ডায়েরির নিখুঁত উপস্থাপন! শব্দ, আবেগ আর বর্ণনার অদ্ভুত রসায়ন পাঠককূলের মনন আর মগজে অঙ্কিত করবে অদেখা রাশিয়ার অবিকল বাস্তবচিত্রগুলি। সেই সঙ্গে পাঠক হৃদয়ের আকাঙ্খা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে বইটির দ্বিতীয় খন্ডে চোখ বুলানোর জন্য।
প্রসূন রায় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার দেবীতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষক দম্পতি প্রভাস চন্দ্র রায় এবং ঊষা রানী মিস্ত্রীর দুই ছেলেমেয়ের প্রথম সন্তান । শৈশব ও কৈশোর কেটেছে গ্রামে। খুলনা পাবলিক কলেজ হয়ে সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ট্যুরিজম এন্ড হসপিট্যালিটি ম্যানেজমেন্টে পোষ্ট গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেন। স্বাধীনচেতা এই লেখক বর্তমানে তাঁর নিজস্ব আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষামূলক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং পার্টনার হিসেবে কর্মরত আছেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশের এই অঙ্গনে তিনি অস্ট্রেলিয়ার PIER, নিউজিল্যান্ডের ENZ, কানাডার CCEA এবং জার্মানির ICEF সার্টিফাইড এডুকেশন কাউন্সিলর হিসেবে সুপরিচিত। এছাড়াও দেশের ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি ইন-বাউন্ড এবং আউট-বাউন্ড ট্যুর প্ল্যানার হিসেবেও দীর্ঘদিন ধরে তার নিজস্ব অন্য একটি ট্যুরিজম কোম্পানী পরিচালনা করে আসছেন । পেশাগত কারনে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারী আমন্ত্রণে প্রায়ই লেখককে সারা বিশ্ব ভ্রমণ করতে হয়। এভাবে তিনি ইতোমধ্যেই ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের প্রায় পঁচিশটির মতো দেশ। বিভিন্ন ধরনের ট্রাভেল ব্লগ, ম্যাগাজিন এবং পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করলেও এটিই তাঁর প্রথম ভ্রমণ গ্রন্থ। তাঁর সমগ্র ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ধীরে ধীরে বই আকারে প্রকাশের ব্যাপারে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী মিরা সরকার এবং একমাত্র কন্যা অর্জিতা রায়কে নিয়ে তাঁর সুখী সংসার।