বাঙালির সম্ভাবনাকে পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলতে হলে আমাদের আজ সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে যেমন মুক্ত হতে হবে, তেমনি মুক্তবুদ্ধি, যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদের আলােকে আমাদের মন আলােকিত করতে হবে। আর সেই সঙ্গে জাতির সামনে আমাদের বিজয়, অর্জন, ব্যর্থতা ও সমস্যাগুলাে যুক্তি ও মানবতার আলােকে বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে তুলে ধরে, সবাইকে আশার বাণী শুনিয়ে, প্রগতির পথে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে গিয়ে বিশ্বসভ্যতায় অবদান রাখার জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে হবে। ইউনেস্কো কর্তৃক ২১শে ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বের মাতৃভাষা দিবস বলে ঘােষণা দেওয়ার ফলে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, পৃথিবী আজ মানবজাতির ভাষাগুলােকে বাঁচিয়ে রেখে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার পক্ষপাতী। তাই বিশ্বের এ বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও সভ্যতার অঙ্গনে বাঙালিকে বাঙালি হিসেবেই তার প্রতিভা ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। ইতিহাস, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও মননের যে বিশাল ক্যানভাসে বাঙালির অর্জন ও ব্যর্থতার চিত্রটি ফুটিয়ে তােলা হয়েছে, সে কাজটি সুষ্ঠুভাবে করার মতাে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ক্ষমতা ও তথ্যসম্পদ নিয়ে ড, ফ, র, আল সিদ্দিক রচনা করেছেন অসাধারণ এক বই।
ড. ফ. র, আল সিদ্দিক ১৯৩২ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আগলা ইউনিয়নে অবস্থিত চরমধুচারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতার নাম উম্মতে রসুল এবং পিতার নাম আব্দুল ওয়াদুদ (সােনা মিয়া)। তিনি ১৯৫৩ সালে চুড়াইন তাড়িনি বামা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে সম্মান শ্রেণিতে বিএসসি ও ১৯৬১ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি ভি করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধীনে অ্যাসিস্ট্যান্ট কেমিক্যাল একজামিনার এবং পরবর্তী সময় ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্রের লেকচারার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পরমাণু শক্তি কমিশনের বিভিন্ন পদে চাকরির পর একই বছর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনােলােজির পরিচালক হিসেবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষা ও চাকরি জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ বছর, তেহরানের সেন্টো ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার সায়েন্সে পৌনে ২ বছর এবং ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে ৪ বছর পােস্ট গ্রাজুয়েট গবেষণায় এবং সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পরমাণু চুল্লি গবেষণা ইন্সটিটিউটে ১৩ মাস যাবৎ পােস্ট ডক্টরাল গবেষণায় নিয়ােজিত ছিলেন। তার চাকরি জীবনে বাকি দিনগুলােতে পরমাণু শক্তি কমিশনের লাহাের, ঢাকা ও সাভারস্থ গবেষণাগারে নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন। ড. ফ. র, আল সিদ্দিকের প্লাস্টিক ও অনূদিত ইলেকট্রিসিটি শেখার সহজ উপায় নামক দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমি এবং রসায়ন সমিতির জীবন সদস্য এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সদস্য।