"মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সিপাই নিয়োগ সহায়িকা" বইটির 'মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও পরিচিতি' অংশ থেকে নেয়াঃ মাদকের সাথে মানুষের সহঅবস্থান মানবসভ্যতার আদিকাল থেকে মাদক কেবল নেশার বস্তু বা বিনােদনের মাধ্যম নয়। চিকিৎসা শিল্প ও বিজ্ঞানে মাদক ও এর উপাদান। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার অতি প্রাচীন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ভারতবর্ষে প্রথম আফিম চাষ ও আফিম ব্যবসা শুরু করেছিল এবং এর জন্য একটি ফরমান জারী ও কিছু কর্মকর্তা নিয়ােগ করে। বৃটিশরা ভরতবর্ষে আফিম উৎপাদন করে চীনসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করে এবং এদেশে আফিমের দোকান চালু করে। ১৮৫৭ সনে আফিম ব্যবসাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন এনে প্রথম আমি মাইন প্রবর্তন এবং ১৮৭৮ সনে আফিম আইন সংশােধন করে আফিম ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়। অতঃপর গাঁজা ও মদ থেকেও রাজস্ব আদায় শুরু হয় এবং ১৯০৯ সনে বেঙ্গল এক্সাইজ অ্যাক্ট ও বেঙ্গল এক্সাইজ ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয় নি, মদ ও গাঁজা ছাড়াও আফিম ও কোকেন দিয়ে তৈরী বিভিন্ন ধরনের মাদকের প্রসার ঘটলে ১৯৩০ সনে সরকার The Dangerous Drugs Act-1930 প্রণয়ন করে। একইভাবে সরকার আফিম সেবন নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৩২ সনে Tlie Opiur Snloking Act-1932 প্রণয়ন এবং ১৯৩৯ সনে The Dangerous Drugs Rules-1939 প্রণয়ন করে। ১৯৪৭ সনে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলমানদের জন্য মদ পান নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৫০ সনে The Prohibition Rules-1950 তৈরি হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৭ সনে The Opium sales Rules-1957 প্রণীত হয়। এরপর ষাটের দশকে বেঙ্গল এক্সাইজ ডিপার্টমেন্টকে এক্সাইজ এন্ড ট্যাক্সেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে নামকরণ করে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৬ সনে এক্সাইজ এন্ড ট্যাক্সেশন ডিপার্টমেন্টকে পুনরায় পুনর্বিন্যাসকরণের মাধ্যমে নারকটিকস এন্ড লিকার পরিদপ্তর নামে জাতীয় রাজস্ব বাের্ডের অধীন ন্যস্ত করা হয়। ১৯৮২ সনে কোডিন মিশ্রিত কফ সিরাপ, এ্যালকোহলযুক্ত কতিপয় বাথটনিক, সিরাপ ইত্যাদির উৎপদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৮৪ সনে আফিম ও মৃতসঞ্জীবনী সুরা নিষিদ্ধকরণ এবং ১৯৮৭ সনে গাঁজার চাষ বন্ধ ও ১৯৮৯ সনে সমস্ত গাজার দোকান তুলে দেয়া হয়। ১৯৮৯ সন পর্যন্ত নারকটিকস এন্ড লিকার পরিদপ্তরের মা লক্ষ্য ছিল দেশে উৎপাদিত মাদকদ্রব্য থেকে রাজস্ব আদায় করা। আশির দশকে সারা বিশ্বে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে এ সমস্যার মােকাবেলায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রােধ, মাদকের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গণসচেতনতার বিকাশ এবং মাদকসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ১৯৮৯ সনের শেষের দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে অধ্যাদেশ, ১৯৮৯ জারী করা হয়। অতঃপর ২ জানুয়ারি, ১৯৯০ তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯০ প্রণয়ন করা হয় এবং নারকটিকস এন্ড লিকারের স্থলে একই বছর তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ তারিখ এ মনিরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্ত করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। দেশে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রােধ, ঔষধ ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহার্য বৈধ মাদকের শিল্প অনায় সাপেক্ষে আমদানি, পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্যের সঠিক পরীক্ষণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরােধ কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতিসং,সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে নিবিড় কর্ম-সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলা অধিদপ্তরের প্রধান দায়িত্ব।