নায়না শাহ্রীন চৌধুরীর গল্প পাঠক মনে দারুণ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। তিনি একটি বিষয়কে গল্পে রূপদানের কৌশল খুব ভালোভাবেই জানেন। তার সাথে আরো জানেন যে, সেই গল্পকে কি করে শৈল্পিক করে তোলা যায়। গল্পে যদি বাঁকবদল, ব্যঞ্জনা, ভাষার কারুকাজ আর দার্শনিকবোধ না থাকে তাহলে সেটা আর গল্প হয়ে ওঠে না। নিছক কিছু ডায়লগ, ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অসংখ্য গল্পের নামে― না গল্প আমাদের পাঠ করতে হয় বিভিন্ন্ মাধ্যমে। প্রকৃত গল্প পাঠের যে তৃপ্তি তা সচরাচর আমরা পাই না। ‘নীল প্রজাপতি এবং অন্যান্য’ বইটির গল্প পাঠ করে পাঠক মুগ্ধ ও বিস্মিত না হয়ে পারবেন না। আকাশে বিদ্যুৎ চমকে মুহূর্তে যেমন আলোকিত করে দেয় চারপাশ নায়না শাহ্রীনের গল্পও ঠিক তেমন। তার গল্পের ভাষাভঙ্গি একদম নিজস্ব। দুর্দান্তভাবে শুরু করেন গল্প। পাঠককে আগ-পিছ করতে দেন না। তার বলার ঢং এতোটাই আকর্ষণীয় যে তার গল্পটি আপনাকে পড়া শেষ না করে ছাড়বে না। তার গল্পের যেকোন জায়গা থেকে আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন। গল্পের চরিত্রগুলো খুবই পরিচিতজন হয়ে ওঠে। ৬৪টি পৃষ্ঠার বইটিতে ১৬টি গল্প সূচিবদ্ধ হয়েছে। প্রতিটি গল্পের বিষয়-বৈচিত্র্য আলাদা আলাদা। তবে এসব গল্পের মধ্যে আছে প্রেম, মানবিকতা ও বোহেমিয়ান সময়ের ছায়া-প্রচ্ছায়া। ‘তৃপ্তি’ গল্পের একটি অংশ পড়া যাক― ‘আঁচলের নিচে ব্লাউজের দুটা বোতাম খুলে ওর মুখে ডান দিকের স্তনবৃন্ত ঢুকিয়ে দিলাম। বাচ্চা কান্না থামিয়েছে। তৃপ্তিতে আঁকড়ে ধরছে আমাকে। আমার চোখ দিয়ে জল নামছে। কার বাচ্চা ও? পাতা কুড়োনি? ফুলওয়ালী নাকি ভ্রাম্যমান পতিতার? ওর মা কেমন করে ওকে ছেড়ে থাকতে পারে?’ এ গল্পটি মানবিকতার একটা প্রামাণ্যগল্প বলা যায়। একটি পথ শিশুর ক্ষুধা মেটাতে দুধ পান করানোর যে দৃশ্য গল্পকার তুলে ধরেছেন তা প্রশংসনীয়। ‘নীল প্রজাপতি’ গল্পটি এ বইয়ের একটি অন্যতম গল্প এবং এ গল্প দিয়েই এ বইটির নামকরণ করা হয়েছে। সদ্য যৌবনে পা দেয়া একটি মেয়ের মনভাবনা ও প্রেমানুভূতি ও নানা ভয় সংশয় দুষ্টমি রয়েছে গল্পটিতে। কিন্তু গল্পের শেষে এসে যখন রাহাত নীল লাবণ্যকে নিয়ে ঘুরতে যেতে যায় তখন নীল লাবণ্য তার স্বরূপে ফিরে আসে। তার মনের মধ্যে জাগে আত্মসচেতনতা। গল্পের শেষ দৃশ্য এমন― ‘বেডসাইড টেবিলে আম্মু, আব্বু, আপু আর আমার পিচ্চিকালের ছবি। ছবিটা শক্ত করে বুকে চেপে ধরি আমি। ফোন আসে রাহাতের। আমি তাকিয়ে থাকি।’
নায়না শাহরীন চৌধুরীর জন্ম ঢাকায় ২২ মে ১৯৮২। পড়াশোনা করেছেন লোক প্রশাসন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখালেখির সূত্রপাত শৈশব থেকেই। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে আরও চারটি গ্রন্থ যার মধ্যে গল্প সঙ্কলন, কবিতা এবং উপন্যাস রয়েছে। লেখালেখি করছেন বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে নারীবাদ, নাগরিক সমস্যা এবং অন্যান্য সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে। এছাড়া, সঙ্গীতশিল্পী এবং গীতিকবি হিসেবে কাজ করছেন বেতার, টেলিভিশন এবং ফিল্মে। বর্তমানে, জীবিকা নির্বাহে কাজ করছেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল বিপণন সংস্থায়।