নাটোরের লাভলী ইয়াসমীন কোনোভাবেই বনলতা সেনের মতো কল্পিত চরিত্র নয়—একজন শ্রমিকনেত্রী। শ্রমিকের জীবন সংগ্রাম ঘিরেই তাঁর আজকের জীবন আবর্তিত হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সে শিশু শ্রমিক হিসেবে একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেন। সাধারণভাবে এধরনের কষ্টকর জীবন সংগ্রামের মধ্যে যেটা হয়, মানুষের জীবনের কাব্য সুষমামন্ডিত মনকে শুষে নেয়। তাঁর ক্ষেত্রে বাস্তবে সেটা ঘটেনি। শ্রমসাধ্য দিন অতিবাহিত করার পর রাতে তিনি কাব্যচর্চায় নিমগ্ন হয়ে পড়েন। নিপুণ তুলির টানে তিনি ফুটিয়ে তোলেন গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। বড় সহজ নয় এই কাজ। জীবনের ঘটনাবলীর বিদ্রোহী সত্তাই তাকে জীবনের রঙে রাঙিয়ে নিতে শিখিয়েছে। বাবা সিরাজুল খালেক সিদ্দিকী, মা মারিয়ম বেগম লাল মাটির দেশ বীরভূম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন নাটোরে। তাঁরা দুজনেই প্রাথমিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতে গিয়েও তাঁদের শিশু সন্তানদের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন, এগিয়ে দেন বড় ছেলে শামসুজ্জুহাকে। জীবনের মণিকোঠায় এই অভিজ্ঞতার সম্পদগুলিই তাঁকে কাব্য রচনা করতে সাহায্য করেছে।
শ্রমিকনেত্রী হিসেবেই তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ গড়ে ওঠে, অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়—অনেক উন্নত দেশের থেকে আবার প্রস্তাবও তাঁর কাছে আসে। কিন্তু তিনি মাটির কাছাকাছি বাংলাদেশের শ্রমিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চেয়েছিলেন— থেকেছেনও। আমেরিকার ওরেগান বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপিকা লামিয়া করিম লাভলীর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি ‘কৃষ্ণ’ ও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ সহ কয়েকটি কবিতা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করেন। বর্তমান দ্বিভাষিক কাব্যগ্রন্থে ৩৩টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষত নারী শ্রমিকদের জীবনগাঁথা এই কাব্যগ্রন্থের অন্যতম বিষয়বস্তু। অনুবাদের কাজটিও অত্যন্ত সুচারুরূপে সম্পন্ন করা হয়েছে।