"ভোলগা থেকে গঙ্গা" বইয়ের পেছনের কভারে লেখা: সাত-আট মাসে প্রথম সংস্করণ নিঃশেষ হয়ে যাওয়া লেখকের খুশি হবার মতাে ব্যাপার কিন্তু তার চাইতেও সন্তোষজনক ব্যাপার হলাে--সনাতনপন্থী জ্ঞানপাপীদের অসংযত রচনামৃত, যেগুলাে কখনাে কখনাে প্রকাশ পেয়েছে গালি-গালাজের মাধ্যমে। জনকয়েক সজ্জন সংযমরক্ষার ব্যর্থপ্রয়াসে পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলােচনায় নেমেছেন। তাঁরা আশা করে বসে আছেন যে, বর্তমান লেখক তাঁদের লেখার প্রতিবাদ জানাতে কলম ধরবেন। যদিও উক্ত সমালােচকাদের বিরামহীন লেখনীকে অচল করা আমার দ্বারা সম্ভব নয় তবুও দু-একটি কথা জবাব হিসেবে জানাতে হচ্ছে। এই গ্রন্থের প্রতিটি কাহিনীর পৃষ্ঠপটে রয়েছে প্রাসঙ্গিক যুগ সম্পর্কিত গুরুত্ববাহী বস্তুনিচয়, যার তালিকায় আছে-দুনিয়ার কতই না ভাষা, তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান, মাটিপাথর-তামা-পিতল লােহার ওপর খােদাই করা সাংকেতিক লিপি অথবা সাহিত্য এবং অলিখিত গীত-কাহিনী-রীতি-রেওয়াজ...ইত্যাদি ইত্যাদি। গ্রন্থ-রচনাকালে লেখকের ইচ্ছা ছিল এবং যে-ইচ্ছা এখনও সজীব তাহলাে গৃহীত তথ্যপ্রমাণের প্রামাণিকতা গ্রন্থের পরিশিষ্টে সংযােজন করার। কিন্তু ঐ পরিকল্পনার ব্যাপকতা ও বিশালতা এবং সুষ্ঠুভাবে রূপায়ণের জন্য প্রয়ােজনীয় সময়ের অপ্রতুলতার কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত হাত গুটিয়ে নিতে হয়েছে। এ ধরনের বইতে মামুলি একটা পরিশিষ্ট জুড়ে দিলেই দায়মুক্ত হওয়া যায় না। আর এটাও মনে হয়েছে, ঐ ধরনের পরিশিষ্টের কলেবর মূল গ্রন্থের আয়তনের তুলনায় অনেক বড় হবে। বর্তমান সংস্করণে পরিবর্তন করা হয়েছে যৎসামান্য, এক ঝলকে কোনাে রকমে কাজ সেরে নিয়েছি। ইচ্ছে ছিল, প্রতিটি কাহিনীর সঙ্গে একটি রঙ্গিন চিত্র দেবার কিন্তু যুদ্ধকালীন দুঃসময়ে সেটাও সম্ভব হলাে
তাঁর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সনাতন হিন্দু ভূমিহার ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তাঁর আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তাঁর পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।
পুরস্কার তালিকা পদ্মভূষণ (১৯৬৩) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)
ব্যক্তিগত জীবন জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ড (১৯১৯) তাঁকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন। তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তবুও তার অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ। পরে শ্রীলংকায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।