"সংগঠন ও বাঙালি" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: বাঙালির সাংগঠনিক প্রতিভা কেন কম? কেন বাঙালির সংগঠন টেকে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন এমন একজন বাঙালি, যিনি নিজে গড়ে তুলেছেন এক অনন্য-উদাহরণ সংগঠন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন, টিকিয়ে রেখেছেন বিকাশমান। কিন্তু এ-গ্রন্থ তাঁর সংগঠন গড়ে তােলার অভিজ্ঞতার বয়ান নয়, এ হচ্ছে একজন অভিজ্ঞ ও প্রশ্নশীল, মননশীল, প্রাজ্ঞ মানুষের নিজের ভেতরে জেগে ওঠা সওয়ালের জবাব ঢুঁড়ে ফেরা, ইতিহাসের মধ্যে, সাহিত্যের মধ্যে, সমাজের মধ্যে এবং নিজের জীবন ও নিজের চারপাশের মধ্যে। মৌলিকভাবেই এ-প্রশ্ন তিনি তুলেছেন এবং মৌলিকভাবেই এ-প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণ করে গেছেন, ফলে আমরা লাভ করেছি একটা প্রায়-দার্শনিক গ্রন্থ। বেদনা, ভালােবাসা আর প্রজ্ঞার সঙ্গে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লক্ষ করেছেন, বাঙালির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণ তার আত্মপরতা, অসহায়তা, আত্মঘাত আর উনস্বাস্থ্য। তিনি খুঁজেছেন এই কারণগুলাের বিদ্যমানতার কারণ। লক্ষ করেছেন আমাদের ইতিহাসে সমষ্টির চেয়ে ব্যক্তি কীভাবে প্রধান হয়ে উঠেছে। চিন্তা আর ভাব, প্রশ্ন আর প্রেম, যুক্তি আর শিল্পের সমাহারের অপূর্ব নিদর্শন এই গ্রন্থ, একই সঙ্গে চিন্তা উদ্রেককারী, মনােহর ও প্রসাদগুণময়। আনিসুল হক
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একইসাথে একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিকও। আর সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িয়ে থাকায় একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও পরিচয় লাভ করেছেন তিনি। এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কলকাতার পার্ক সার্কাসে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কামারগাতি গ্রাম। পাবনা জিলা স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক এবং বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার্থে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ঢাকা কলেজ, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আর ষাটের দশকে বাংলাদেশে সাহিত্যের এক নতুন ধারা সৃষ্টির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে, এবং একইসাথে 'কণ্ঠস্বর' নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করে নতুন ঐ সাহিত্যযাত্রাকে করেছিলেন সংহত ও বেগবান। শুধু তা-ই নয়, দেশের মানুষের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে তাদের মাঝে জ্ঞান ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র', যা চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে এই লক্ষ্যে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমূহ এই ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ভাঙো দুর্দশার চক্র', 'আমার বোকা শৈশব', 'নদী ও চাষীর গল্প', 'ওড়াউড়ির দিন', 'অন্তরঙ্গ আলাপ', 'স্বপ্নের সমান বড়', 'উপদেশের কবিতা', 'অপ্রস্তুত কলাম' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক', 'র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার' ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।