সময়টা দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়ানক। স্যাঁতসেঁতে কালো আঁধারে ছেয়ে গেছে চারপাশ। লোকগিজগিজে এ শহরে মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। সম্পর্কের দাম নেই, নেই সম্প্রীতির বন্ধন। সবখানে অনির্ভরতা, অনিশ্চয়তা আর অবিশ্বাসের অমানিশা। পারিবারিক সৌহার্দ্য থেকে রাষ্ট্রীয় শৃংখল—সবখানে নিয়ম ভাঙার জোয়ার। এই ঘনঘোর অন্ধকারে আলো জ্বেলে বসে আছে কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ। বিভ্রান্ত পথিকের দিকবদল অথবা আকস্মিক পথের বাঁকে দিশেহারা যাত্রীর সঠিক নির্দেশনায় যারা বিনিদ্র প্রহরী। ঘুণে ধরা সমাজের সহসা ভাঙন ঠেকাতে তৎপর সেই তরুণদের একজন প্রিয় ভাই ওমর ফারুক। কলম ও কলবের সমন্বিত শক্তির আশ্চর্য মনিকাঞ্চন তার শব্দে-কথায় সুষম হয়ে ওঠে। সুস্থ ও সুন্দর মনস্বিতাসম্পন্ন এ লেখক সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ইতিমধ্যে লিখেছেন দু'হাত খুলে। লিপিকুশলতার আশ্চর্য ঢঙ ও গদ্যের সাবলীলতা তার লেখার ছত্রে ছত্রে এনে দিয়েছে সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। একজন সচেতন শুদ্ধ চিন্তার ধারক হিসেবে বিবেকের তাড়না থেকে তিনি লিখেছেন 'তাপসী কন্যা'। সামাজিক অবক্ষয় রোধে ধর্মীয় অনুশাসনের দায় নিয়ে পাঠকের মনে সুষ্ঠু উপলব্ধি ছড়িয়ে দিতে বইটি বৃহদাংশে সফলতা পাবে বলেই মনে করছি। শক্ত-সাবলীল গদ্যের অধিকারী লেখক ওমর ফারুক বইটিতে তার চিন্তার প্রাতিস্বিকতা ও প্রতিভার মৌলিকত্ব বোঝাতে পেরেছেন সার্থকভাবে। বইটির কিছু অংশ পড়েছি আমি। গল্পের চিত্র ও গদ্যের নানামাত্রিক ঢঙ আমাকে লেখকের ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছে। এক বসায় তরতর করে বলে যাওয়ার মতো বিরল ভাষাদক্ষতা লেখক ইতোমধ্যেই অর্জন করতে পেরেছে বলেই মনে করি। বইটি পাঠককে কেবল ভাবালুতায় আক্রান্ত করবে না; বইটি তাকে নিয়ে যাবে এমন একটি জায়গায়, যেখানে স্বপ্ন ও বাস্তবতায় আশ্চর্য সেতুবন্ধন ঘটে। পাঠকের মনে নানাবিধ প্রশ্ন জাগিয়ে সামাজিক,প্রথাগত বহু বিশ্বাস ও ব্যবস্থার সমূল উৎখাত করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বইটির বিপুল পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি। আশা করছি তিনি অবিরত লিখবেন; অনাগত ভবিষ্যতেও তিনি পচে যাওয়া সমাজকে ভাবতে শেখাবেন। তার কলম, সাহিত্য ও সৃজনশীলতা শুদ্ধ চেতনায় উদ্ভাসিত এক আলোকিত পথে পা বাড়াতে পাঠককে অনুপ্রাণিত করবে। যুগান্তরের পরেও, বাঙালি পাঠকসমাজ তার রচনার শরণাপন্ন হোক—সেই কামনা করি!