শতকের পর শতক ধরে পঠিত ছড়াগুলোকেই চিরকালের ছড়া হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ছড়াগুলো বাংলাভাষীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। প্রায় প্রত্যেক শিশু-কিশোরই এই ছড়াগুলো ছোটবেলায় পড়েছে কিংবা কারো না কারো কাছ থেকে শুনেছে।
ফারুক নওয়াজ নিজেও একজন বিশিষ্ট ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক। সে হিসেবে তার সম্পাদিত ছড়াগুলোর মান ও পাঠকপ্রিয়তা ভালো হবে―এটাই স্বাভাবিক। বইটির সূচিপত্রই এর প্রমাণ। সূচিবদ্ধ ছড়াগুলো হলো―খোকন খোকন ডাক পাড়ি, তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা, চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে, আতাগাছে তোতাপাখি, আয় রে পাখি লেজ ঝোলা, আমপাতা জোড়া জোড়া, মামাবাড়ি যাই, আগডুম বাগডুম, আইকম বাইকম, আয়রে আয় টিয়ে, ওখানে কে রে, বর্গী এলো দেশে, চাঁদমামা এবং নোটন নোটন। ১৬ পৃষ্ঠার রঙিন এ বইটিতে প্রতিটি ছড়ার সাথেই রয়েছে চমৎকার সব ছবি। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বইটি রাখা উচিত। কারণ এ বইয়ের ছড়াগুলো বিভিন্ন বইয়ে রয়েছে, যা হয়তো একত্র করে পাঠ করা হয়ে উঠবে না। কিন্তু এক মলাটে এ বইটির মধ্যেই সবগুলো ছড়া পাওয়া যাবে। কয়েকটি ছড়া অনেক ছোট আর কয়েকটি আকারে দীর্ঘ। এই ছড়াগুলো এতই সহজ ও আকর্ষণীয় যে একবার শুনলেই মুখস্থ হয়ে যায়। সাধারণত এই ছড়াগুলো শিশু-কিশোররা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি করে থাকে। প্রতিটি ছড়ার বিষয়-বৈচিত্র্য আলাদা এবং ছড়াগুলো বেশ শিক্ষণীয় বটে। ‘খোকন খোকন ডাক পাড়ি খোকন মোদের কার বাড়ি? আয় রে খোকন ঘরে আয় দুধমাখা ভাত কাকে খায়।’ ‘চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে কদম তলায় কে? হাতি নাচছে ঘোড়া নাচছে সোনামণির বে।’
কিংবা ‘আতাগাছে তোতাপাখি ডালিমগাছে মউ এত ডাকি তবু কথা কও না কেন বউ।’ একবার পড়ামাত্রই এই ছড়াগুলোর আবেদন ও আনন্দ উপলব্ধি করতে পারে শিশু-কিশোররা। এ জন্যই ছড়াগুলো বছরের পর বছর শিশু মুখের প্রথম বুলি হয়ে উঠতে পারে। মায়ের মুখে শুনে শুনে একবার না, বারবার এই ছড়াগুলো তাদের মনোজগৎকে পরিপূর্ণ করে। বইটি একটি অসাধারণ উপহার হতে পারে যেকোনো শিশু-কিশোরের জন্য। বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতির নানা দিক এই ছড়াগুলো বহন করে। ছড়ার ছন্দে ছন্দোময় হয়ে উঠুক শিশু-কিশোরদের জীবন।
Faruk Nawaz- জন্ম ১লা নভেম্বর ১৯৫৮, খুলনা শহরে মাতুলালয়ে। পিতা কাজী মাবুদ নওয়াজ প্রয়াত। মা কাজী জাহানারা। পৈতৃকবাস মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন মুজদিয়া। পিতামাতার চতুর্থ সন্তান। সৃষ্টিশীল সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম; বিধায় ছোটবেলাতেই লেখালেখির হাতেখড়ি। পড়াশুনা করেছেন খুলনা, মাগুড়া, যশোর ও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ইসলামের ইতিহাস ও বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রাকমুক্তিযুদ্ধ সময়ে পত্রপত্রিকায় কবিতা ছাপার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু। প্রথম বই বড়োদের কবিতা আগুনের বৃষ্টি (১৯৭৭)। দ্বিতীয় বই ও শ্রেষ্ঠ বিবেচিত গ্রন্থÑকিশোরকাব্য আমার একটা আকাশ ছিলো (১৯৮৮)। এরপর গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস-প্রবন্ধ, ছড়া-কবিতা এবং বড়োদের সাহিত্য মিলিয়ে বইয়ের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। পুরস্কার : অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, এম. নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, মধুসূদন একাডেমী পুরস্কার, ড. শহীদুল্লাহ পাঠাগার সম্মাননা, পূরবী সম্মাননা, প্রিয়জন অ্যাওয়ার্ড, পালক অ্যাওয়ার্ড, ছোটদের মেলা সম্মাননা, নজরুল সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, প্রতীকী সম্মাননাসহ ডজন খানিক। পেশায় সরকারি চাকুরে। বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর প্রোগ্রাম অফিসার এবং মাসিক শিশু পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পদে কর্মরত।